মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যায় ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যার মামলায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এই রায় ঘোষণা করেন।

বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম (৪৫) ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন আবুল হোসেন মাস্টার (৫২), হাবিবুর রহমান (৪০) ও আবদুর রাজ্জাক (৩৫)। তাদের মধ্যে আবুল হোসেন নিহত আকলিমা বেগমের দেবর। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আর হাবিবুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে।

যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবদুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। তাঁরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। আদালত তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন। অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বলেন, ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে খুন হন আকলিমা বেগম ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসান। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। বেরিয়ে আসে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

২০১৮ সালের ৩১ মে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে দণ্ড পাওয়া এই সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

মামলার বাদী দুলাল হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আবুল হোসেন মাস্টার ও হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই জাহিদদের সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তাঁরা দুই ভাই বড় হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর জাহিদ ছিলেন একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চান। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এরই জেরে এই হত্যাকাণ্ড।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদী দুলাল হোসেন এবং আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন দণ্ডিতদের স্বজনেরা। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।