প্রযুক্তিগত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ: দুদক চেয়ারম্যান

সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি সুরুচি পান্টের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি সুরুচি পান্টের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব দুর্নীতি হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, অপরাধীরা এমনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং।

আজ বুধবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি সুরুচি পান্টের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে এই বৈঠক হয়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন হচ্ছে কি না, তা মনিটরিংয়ের জন্য কমিশন তাদের ডেটাবেইসে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিতভাবে এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ট্রেডবেইজড মানি লন্ডারিংসহ সব ধরনের অবৈধ লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থ পাচার বন্ধ করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। যাঁরা জাল-জালিয়াতি করে ব্যাংকঋণ নিয়েছেন, তাঁরাই ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমের মানি লন্ডারিং করছেন বলে আমাদের ধারণা।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুদকের কার্যক্রমে সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না, যা আমাদের বড় শক্তি। আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে, দুদক তার কাজকর্মের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় জন–আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তাই নাগরিকদের আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে যে ১১টি দেশ বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব দিতে হলে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উল্লিখিত গুণগত শিক্ষার মাধ্যমেই জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ পাওয়া যেতে পারে। সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টি করা না গেলে জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ পাওয়ার সুযোগ সীমিত। ঠিক এ কারণেই কমিশন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশন উত্তম চর্চার বিকাশ, তথ্যবিনিময়, দুর্নীতি দমনে কৌশল নির্ধারণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য ভুটান, রাশিয়া ও ভারতের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। আরও বেশ কয়েকটি দেশের এজাতীয় সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনার জন্য দেশে-বিদেশে নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর মুখ্য বিষয় হতে পারে না। আপনাদের প্রথিতযশা প্রশিক্ষকেরা বাংলাদেশে এসে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কমিশন স্থানীয়ভাবে যানবাহন, লোকাল হসপিটালিটিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে পারে।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কমিশনের অভ্যন্তরে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না।

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, নৈতিকতাবিহীন উন্নয়ন কখনো কখনো অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। তাই কমিশন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করেছে। এসব সততা সংঘের সদস্যদের মাধ্যমে কমিশনের অর্থায়নে দুর্নীতিবিরোধী এবং তাদের পরিশুদ্ধ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, সততা ও নৈতিকতা নিবিড় চর্চার বিষয়। তাই নৈতিক চর্চার প্রাত্যহিক অনুশীলনের উদ্দেশ্যে সততা সংঘ রয়েছে—এমন প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্টোরে বিভিন্ন শিক্ষা–উপকরণ, চিপস, চকলেটসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এসব পণ্য কিনে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করছে। এসব সততা স্টোরে অনৈতিকতার কোনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি; যা কমিশনকে আশান্বিত করছে।

এ সময় দুদক চেয়ারম্যান প্রতিনিধিদলটিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এমন বেশ কিছু উপকরণ যেমন: সুবচনসংবলিত খাতা, জ্যামিতি বক্স, স্কেল, ছাতা, টিফিন বক্স, ওয়াটার পট, ব্যাগ ইত্যাদি দেখিয়ে বলেন, এসব সামগ্রী দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত বিতরণ করা হচ্ছে।

এ সময় সুরুচি পান্ট জানান, ইউএনওডিসির অর্থায়নে পরিচালিত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারসিয়ারি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা বিকাশে ‘এডুকেশন ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সঙ্গে দুদকের এসব কর্মসূচির মিল রয়েছে। এই কর্মসূচি গেমসসহ বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার বিকাশে কাজ করছে। বাংলাদেশে পাইলটিং হিসেবে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের এসব কার্যক্রম অনুশীলনযোগ্য। টেকনিক্যাল সহযোগিতার মাধ্যমে কমিশনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিকাশে ইউএনওডিসি কাজ করতে পারে।