খুলনায় ভাসমান খেতে সবজি চাষ

খুলনায় এখন সবজি চাষের স্বপ্ন দেখছেন ভূমিহীন কৃষকেরাও। সরকারি বিভিন্ন খাল-বিলে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন তাঁরা। ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে একদিকে যেমন পারিবারিক চাহিদা পূরণ করছেন, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে বেশ আয়ও করছেন ওই কৃষকেরা।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে ওই ভাসমান বেডে সবজি চাষ। প্রাথমিকভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৭০ জন ভূমিহীন চাষি ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন। উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধুগ্রাম, মিকশিমিল ও রংপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। যেসব খাল ও বিল বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে পূর্ণ থাকে এবং সেখানে কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না, এমন জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে সবজির বেড। এ ক্ষেত্রে ওই এলাকার কৃষকেরা স্থানীয় খাল ও বিলকে বেছে নিয়েছেন। বেডে কৃষকদের চাষ করা সবজির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, পটোল, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজি।

খালের পানিতে বেড তৈরি করতে কৃষকেরা ব্যবহার করেছেন বাঁশের চালি। তার ওপর দিয়েছেন প্রায় এক ফুট ওই বিলেরই কচুরিপানা। আর কচুরিপানার ওপর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটি। দেওয়া হয়েছে সামান্য কিছু জৈব সারও। আর ওই মাটিতে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। প্রতিটি বেডের আয়তন লম্বায় ১৪ ফুট ও চওড়ায় ৭ ফুট।

ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রাম খালে গিয়ে দেখা যায়, খালের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পিচঢালা পথ। সড়কের ওপর দাঁড়িয়েই দেখা যায়, খালের পানিতে ভাসছে সারি সারি বেড। ওই বেডেই ছড়িয়ে আছে সবুজের সমারোহ। কোনোটি আবার লাল। খালের পানিতে ওই দৃশ্য এক অপরূপ শোভা সৃষ্টি করেছে।

ওই খালে সবজি চাষ করছেন মধুগ্রামের রমজান মোড়ল। তিনিও একজন ভূমিহীন কৃষক। খালে রয়েছে তাঁর তিনটি বেড। রমজান মোড়ল বলেন, তাঁর চাষাবাদ করার কোনো জায়গা নেই। অন্যের জমিতে দিনমজুর খেটেই তাঁর সংসার চলে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবার প্রথমবারের মতো সরকারি খালে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি চাষ শুরু করেছেন। ওই বেডে লাগিয়েছেন লালশাক ও লাউ। ইতিমধ্যে লালশাক তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন আর লাউয়ের চারা কেবল বড় হতে শুরু করেছে।

পাশেই রয়েছে সুরমান গাজীর পাঁচটি বেড। ওই বেডে তিনি লাগিয়েছেন লালশাক, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দুল ও পটোল। এরই মধ্যে কয়েক হাজার টাকার লালশাক ও ঢ্যাঁড়স বাজারে বিক্রি করেছেন তিনি। পটোলের ফলনও ভালো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে পটোলও বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

সুরমান গাজী বলেন, তাঁর নিজের কোনো জমি নেই। তাই নিজের মতো করে কোনো ফসল ফলাতে পারতেন না। কয়েক মাস আগে ভাসমান বেডে সবজি চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার টাকার সবজি তিনি বিক্রি করেছেন।

স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, তিন বছর আগে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওই খালে সবজি চাষ শুরু করেন মহসিন সরদার। পরে দিন দিন তা প্রসারিত হচ্ছে। এখন অনেকেই ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পুরোটাই জৈব পদ্ধতিতে হওয়ায় সবজিগুলো দেখতেও অনেক ভালো হয়। এ কারণে বাজারে ওই সবজির চাহিদাও বেশি।

এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ ভূমিহীন কৃষকদের নতুন আলো দেখাচ্ছে। ডুমুরিয়ায় যাঁরা ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন, তাঁদের সবাই ভূমিহীন। নিজের জন্য সবজি উৎপাদন করতে পেরে তাঁরা খুব খুশি। ওই সবজি দিয়ে একদিকে যেমন তাঁদের পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করেও তাঁরা আয় করছেন। এ ছাড়া ওই সবজি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। উৎপাদন খরচও তুলনামূলক অনেক কম।