উপাচার্যের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কঠোর অবস্থানে আছেন। আন্দোলনকারী হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্লোগানে আজ বৃহস্পতিবার মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

আজ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্য পদত্যাগপত্র না করা পর্যন্ত তাঁরা কোনোভাবেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। এ দাবিতে তাঁরা সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগেও কয়েকবার উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। প্রতিবারই আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪টি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে প্রকাশ করে। ওই আদেশের ৪ নম্বরে বলা হয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক্‌স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা হবে না। যে ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে এত কিছু, সে বিষয়ে আদেশের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না।

বাকি সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ বা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটবে না; শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ তাঁদের একাডেমিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না এবং এমনটা হলে ওই শিক্ষককে আইনের আওতায় আনা হবে; ভর্তি হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার নোটিশ দেওয়া হবে না; সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে; হলে প্রতি সিটের ভাড়া ১৫০ টাকা এবং রুমের ভাড়া ৫০ টাকা করা; ভর্তি ফি সর্বমোট ১৪ হাজার টাকা ও সেমিস্টার ফি ২ হাজার টাকা করা এবং বিভাগ উন্নয়ন ফি বাদ দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নামে যে টাকা দেওয়া হয় তার জবাবদিহি করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন।

এদিকে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করাকে সহজভাবে নিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাচান মাহমুদ বলেন, ‘এই ভিসি ছিলেন বিএনপিপন্থী, তিনি কী করে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে থাকেন। তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সদস্য। বঙ্গবন্ধুর এই মাটিতে বিএনপিপন্থী ভিসির কোনো জায়গা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসির পদত্যাগ না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।’

উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে ১৪ দফা দাবি করেছিল। আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ওই দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। এরপরও এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কতটুকু যৌক্তিক, তা আপনাদের বিবেচনার বিষয়। আর পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়টা শুধু আমাদের এখানে নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী ঢাকা থেকে ঢেউ তুলেছে, যার প্রভাব গোপালগঞ্জে এসে পড়েছে।’