পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি: ঢাবির ডিনের ব্যাখ্যাকে 'ফতোয়া' বলল সাদা দল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের মানববন্ধন। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের মানববন্ধন। ছবি: প্রথম আলো

লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে বলে অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের দাবিকে ‘ফতোয়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি কোর্সে নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাত্রলীগের ৩৪ নেতা-কর্মীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে সাদা দল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে সাদা দলের শিক্ষকেরা এই দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ ভর্তি বাতিল ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

সাদা দলের মনোনয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের ডিন নির্বাচনে জয়ী অধ্যাপক মো. হাসানুজ্জামান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের দেওয়া ব্যাখ্যাকে ‘ফতোয়া’ হিসেবে আখ্যা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত কমিটি করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন তিনি।

মানববন্ধনে সাদা দলের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের একটি বড় নজির হলো ভর্তি প্রক্রিয়ার সব নিয়ম ও বিধি-বিধান উপেক্ষা করে মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও গর্হিত অপরাধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন প্রোগ্রামের তদানীন্তন পরিচালক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। অবৈধ ও অন্যায় একটি কাজকে নিয়মসিদ্ধ বলে তাঁদের দেওয়া ব্যাখ্যা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’

এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত যেকোনো কোর্সের কারিকুলাম, ব্যবস্থাপনা ও ভর্তি-প্রক্রিয়ার শর্তাবলি নির্ধারণে চূড়ান্ত অনুমোদনের কর্তৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন-পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে সুপারিশ আকারে প্রস্তাব আসতে পারে। সেই সুপারিশ অনুষদ সভা, ডিনস কমিটি ও বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপস্থাপিত হয়। কাউন্সিল অনুমোদন দিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা বিধিবদ্ধ হয়। কিন্তু ৩৪ জনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম অনুসরণ না করায় এদের ছাত্রত্ব অবৈধ। তাদের ভর্তি করার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও নৈতিক স্খলনের অপরাধে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাদা দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আপামর মানুষের গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ভর্তি প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল। গত কয়েক বছরে কর্তৃপক্ষের অমনোযোগিতা ও দুর্বলতার কারণে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে নজিরবিহীনভাবে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ভর্তি করানো হয়েছে। ডিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়মসিদ্ধ নয়। তাঁর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। সম্পূর্ণ অবৈধ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিধি অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত।’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক আহ্বায়ক এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।