সক্ষমতা বাড়াতে বহুমাত্রিক কার্যক্রম চলছে: দুদক চেয়ারম্যান

কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হাইউন গুইয়ের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হাইউন গুইয়ের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য উন্নয়ন-সহযোগীদের আর্থিক সহযোগিতার চেয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসংবলিত কর্মকৌশলের বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাঁর মতে, কমিশনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজস্ব সক্ষমতার ঘাটতি, কাঙ্ক্ষিতমাত্রার জন-আস্থার অভাব, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা, তথ্য দিতে অনীহা।

আজ বৃহস্পতিবার কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হাইউন গুইয়ের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে। পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে এই বৈঠক হয়। পরে বৈঠকের বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় দুদক।

কোইকা প্রতিনিধিদলকে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে কমিশন বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজ কমিশনের ১০ জন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে ঢাকায়, ১০ জন কর্মকর্তা ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (সিবিআই) ও ২ জন কর্মকর্তা থাইল্যান্ডে তদন্ত ও প্রসিকিউশনের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এসব কার্যক্রমের ফলে কমিশনের সক্ষমতার কিছুটা হলেও উন্নত হবে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশনের মামলায় একসময় সাজার হার মাত্র ২২ শতাংশে নেমে এসেছিল। এটা বর্তমান ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। তিন বছর ধরে সাজার হারের একটি ইতিবাচক সামঞ্জস্যপূর্ণ ধারাবাহিকতা রয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করা, থামিয়ে দেওয়া, প্রতিরোধ ও আইনের মুখোমুখি আনতে যে মানের প্রযুক্তির প্রয়োজন, তা কমিশনের কাছে এখনো নেই। কমিশনের নিজস্ব ফরেনসিক ল্যাব, মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম না থাকায় মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারে যেসব সমস্যা হয়, তা তিনি প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, পারস্পরিক আইনগত সহায়তা অনুরোধের (এমএলএআর) মাধ্যমে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়, তা প্রায়ই সময়মতো পাওয়া যায় না। তথ্য না পাওয়ার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষ করা যায় না। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। এবং পাচারকৃত সম্পদও ফিরিয়ে আনা যায় না।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, ঘুষ লেনদেন হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করার জন্য যে মানের প্রযুক্তির দরকার, তাতেও কমিশনের ঘাটতি রয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের প্রযুক্তির উন্নয়ন, কর্মকৌশলপত্র প্রণয়ন, উত্তম চর্চার শেয়ারিং এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোইকার সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রতিনিধিদলটিকে স্বাগত জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকারি সেবা প্রদানে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ প্রণয়ন করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছে দুদক। এর মাধ্যমে সুশাসনের পথকে আরও সুগম করার লক্ষ্যে এ জাতীয় সুপারিশ করা হচ্ছে।

বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান সততা সংঘ, সততা স্টোর, গণশুনানিসহ কমিশনের প্রতিরোধ এবং সৃজনশীলমূলক কার্যক্রম প্রতিনিধিদলটিকে অবহিত করেন।

কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হাইউন গুই বলেন, তরুণ প্রজন্মের নৈতিকতার বিকাশে দুদক যা করছে, তা সত্যই প্রশংসনীয়। তরুণদের নৈতিকতার বিকাশে ব্যয় করা অর্থ দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের সমতুল্য। দুর্নীতি দমন কমিশনকে কীভাবে কারিগরি সহযোগিতা করা যায়, এ বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।