নূর চৌধুরীকে ফেরানোর লড়াইয়ে এক দফা এগোলো বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে কানাডার আদালতের এক রায়ে।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের অন্যতম এস এইচ বি এম নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের এক আবেদনে সাড়া দিয়েছেন কানাডার আদালত।

বাংলাদেশ সরকারের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডায় নূর চৌধুরীর অবস্থানসংক্রান্ত তথ্যের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে দেশটির আদালত। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার কানাডার ফেডারেল কোর্টের বিচারকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দেশটির অটোয়া প্রশাসনকে এ নির্দেশ দেন।

এর মধ্য দিয়ে কানাডার অটোয়া আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেরে গেছে।

কানাডার দ্য স্টার পত্রিকা গতকাল বুধবার এ খবর প্রকাশ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনির অন্যতম নূর চৌধুরীকে ফেরানোর ব্যাপারে কানাডায় আইনি লড়াইয়ের একটি ধাপে জিতল বাংলাদেশ। কানাডার অটোয়া আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেরে গেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যার রায় কার্যকরের আট বছর পেরিয়ে গেলেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনির অন্যতম নূর চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থানের কারণে ফেরত দেবে না বলে জানিয়ে আসছে কানাডা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসনসংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় দেশটির সরকার জনস্বার্থ রক্ষার যুক্তি দিয়ে নূর চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা করে। ওই মামলায় শুনানি করে বিচারক মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

রায়ে আদালতের বিচারক বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসনসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং নূর চৌধুরীর বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আইন করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয় পঁচাত্তর–পরবর্তী সরকার।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যায় এ মামলার বিচারকাজ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মামলার বিচারকাজ ফের শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা। পলাতক বাকি ছয়জন হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিন। আসামিরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

কানাডার দ্য স্টার সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে কানাডা যাওয়ার পর শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন নূর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী। এর দুই বছরের মাথায় নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আপিল করেও ২০০৬ সালে তাঁরা হেরে যান। কিন্তু তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। এরপরই মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে কানাডায় আইনি লড়াইয়ের একটি ধাপের জয় পেল বাংলাদেশ। কানাডার অটোয়া এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেরে গেছে। নূর চৌধুরীর বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল অটোয়া। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ফেডারেল কোর্ট অব কানাডা একটি নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে কানাডায় অভিবাসী মর্যাদা পাওয়া নূর চৌধুরী সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার তা পুনঃ নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।