চিশতীর স্ত্রী ও ছেলের ৫ ব্যাংক হিসাব জব্দ

দুদক
দুদক

ফারমার্স ব্যাংকে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর স্ত্রী ও ছেলের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ ইমরুল কায়েশ গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম আদালতে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাব থেকে টাকা বেরিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হবে। তাই এসব হিসাব ফ্রিজ করা জরুরি। দুদক কর্মকর্তার আবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালত মোট ৬টি হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দেন।

জব্দ হওয়া হিসাবের মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর পরিচালনায় চারটি, একটি রাশেদুল হক চিশতী ও তাঁর মা রোজি চিশতী পরিচালনা করেন। আরেকটি হিসাব বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাইফুল ইসলাম মাতব্বরের। রাশেদুল হক চিশতীর পরিচালনায় যে চারটি হিসাব জব্দ করা হয়েছে সেগুলো হলো, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখায় আরসিএল প্লাস্টিকস, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স, ডাচ বাংলা ব্যাংকের পল্লবী শাখায় আরসিএল প্লাস্টিকস ও যমুনা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ফিউশন ফুটওয়্যারসের। যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের জব্দ হওয়া হিসাব পরিচালনা করেন, রোজি চিশতী ও রাশেদুল হক চিশতী। সাইফুল ইসলাম মাতব্বরের জব্দ হওয়া ব্যাংক হিসাব স্টান্ডার্ড ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায়।

দুদক বলছে, ফারমার্স ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা ২০১৭ সাল থেকে অনুসন্ধান চলছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি মামলাও হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল করা মামলায় অভিযোগপত্রও দিয়েছে সংস্থাটি। মাহবুবুল হক চিশতীসহ (বাবুল চিশতী) পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। চিশতী ছাড়া যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন মাহবুবুল হক চিশতীর স্ত্রী রোজি চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের চাকরিচ্যুত এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও চাকরিচ্যুত ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান খান।

ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনাটি ২০১৭ সাল থেকে অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে নথিপত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের ঋণের ভাগ নিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক যাত্রা শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সংকটে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে পদ ছাড়তে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী।