শিশুটির প্রতি এত নৃশংস বাবা

সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন। নির্মম এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাজধানীর ১১ বছরের এক শিশু। নির্যাতক ছেলেটির বাবা। ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া
সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন। নির্মম এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাজধানীর ১১ বছরের এক শিশু। নির্যাতক ছেলেটির বাবা। ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া

চোখের নিচে কালশিটে দাগ। শার্ট খুলে ফেলার পর দেখা গেল পিঠজুড়ে লাল লাল ক্ষত। ক্ষতগুলোর দিকে তাকানো যায় না। সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন। নির্মম এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে রাজধানীর ১১ বছরের এক শিশু। নির্যাতক খোদ ছেলেটির বাবা খিলক্ষেতের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল তারেক। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে গতকাল রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজধানীর খিলক্ষেতর বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল তারেকর সঙ্গে বিয়ে হয় এক নারীর। ১৩ বছর আগের এই বিয়ে টিকেছিল মাত্র এক বছর। বিবাহ বিচ্ছেদের সময় তাঁদের একটি সন্তান ছিল। তার বয়স এখন ১১ বছর। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই জানা যায় তারেক মাদকাসক্ত। শুধু মাদকাসক্তই নয়, প্রায়ই স্ত্রীর গায়ে তিনি হাত তোলেন। অত্যাচারের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে স্বামীকে তালাক দেন ওই নারী। এর পর নিজে চাকরি নেন। একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিজের কাছে রেখে বড় করছিলেন।

চাকরি করে সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে কষ্ট হতো ওই নারীর। ছেলের ভরণপোষণ চাইলে তারেক ছেলেকে চাইতেন। তারেক তাকে বলতেন, ছেলেকে ফেরত দিলেই ভরণপোষণ দেবেন।

দুই বছর আগে আর্থিক সংকটে পড়েন শিশুটির মা। তাই বাধ্য হয়ে ছেলেকে তিনি পাঠিয়ে দেন বাবার কাছে। এরপর থেকেই শুরু হয় শিশুটির ওপর অত্যাচার। দুই বছর ধরে মাকে একাধিকবার ছেলেটি বলত, বাবা তাকে পেটায়।

সপ্তাহ খানিক আগে ঘুষি মেরে ছেলেটির নাক ফাটিয়ে দেন তারেক। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ছেলেটিকে প্রথমে বাঁশ দিয়ে পেটানো শুরু করেন তারেক। প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নির্যাতনও চলত। তাই ছেলেটি দৌড়ে বাড়ির পাশে তারেকের বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তারেকের বোন ছেলেটির মাকে ফোন দিয়ে ঘটনা খুলে বলেন।

আহত অবস্থায় ছেলেটিকে প্রথমে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন ওর মা। সেখানে শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা হয়।

ছেলেটি মাকে বহুবার ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম (টাকা দিয়ে বানানো পাইপ ও ছাই) ছবি তুলে দেখিয়ে জানতে চেয়েছে এসব দিয়ে কি হয়? মা ছোট্ট ছেলেটিকে বলেন, এসব নেশার সরঞ্জাম।

শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তারেককে আসামি করে গতকাল বুধবার রাতে খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন ছেলেটির মা। গতকাল রাতেই তারেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্যাতিত ছেলের মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর তারেক থানা থেকে ফোন করে আমাকে শাসিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে আমি আমার নামও প্রকাশ করতে পারছি না।’

শিশুটির মা জানান, আবদুল্লাহ আল তারেক যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার ঠিক আগের ধাপটিই এটি) রয়েছে। তিনি ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলার নামে একটি ফেসবুক পেজ চালান। নিজেকে পর্যটক হিসেবে পরিচয় দেন। খিলগাঁওয়ে আল তারিক প্লাজা নামে একটি শপিংমল রয়েছে। উচ্চশিক্ষিত ঘরের ছেলে তারেকের মাদকাসক্তের অভিযোগ করতেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তারেকের পরিবার কখনো বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমনকি তাকে কখনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি।