সার্ভারে ভুয়া এনআইডির তথ্য, রহস্য অজানা

লাকী
লাকী

রোহিঙ্গা এক নারীর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সুরক্ষিত সার্ভারে থাকার পেছনে কে বা কারা জড়িত, তা শনাক্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় করা মামলার এক মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী রোববার। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে। কিন্তু তারা দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেনি।

আবদুস সালাম নামের হাটহাজারীর এক রোহিঙ্গা ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ওই নারী এনআইডি নিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে চক্রটিকে শনাক্ত করা যাবে বলে ধারণা পুলিশের।

এদিকে লাকী নামের ওই নারীর এনআইডি সার্ভারে থাকার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা না গেলেও ওই ঘটনার পর তদন্তে নেমে নির্বাচন কমিশন ও দুদক ইসির এক কর্মচারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। মামলা করা হয় গ্রেপ্তার তিনজনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে।

রমজান বিবি নামের এক রোহিঙ্গা নারী ‘লাকী’ নাম দিয়ে স্মার্ট কার্ড তোলার জন্য তাঁর এনআইডি নিয়ে গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। সার্ভারে খোঁজ করলে লাকীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে বলে দেখা যায়। লাকীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কিংবা লাকীর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়নি। কাগজপত্রে কোথাও কিছু নেই। এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় পরদিন মামলা করেন। লাকীর সঙ্গে আসা আজিজুর রহমান নামের এক যুবককেও গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর প্রথম আলোতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর শুরু হয় তদন্ত।

>

রোহিঙ্গা নারীর ভুয়া এনআইডি
রোহিঙ্গা আবদুস সালামকে খুঁজছে পুলিশ
থানা-পুলিশের পর সিআইডি তদন্ত শুরু করে
দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। লাকী ও আজিজকে রিমান্ডে নেওয়ার পর দুজনে আদালতে জবানবন্দি দেন। তদন্তের একপর্যায়ে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার সময় গত ২৫ আগস্ট লাকীর স্বামী নজির আহম্মদকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলেও মামলাটি বদলি হয়ে যায়।

৫ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক রোজিনা খাতুন মামলাটি তদন্ত করছেন। মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর কার্যালয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। পলাতক আবদুস সালামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁকে ধরা গেলে জানা যাবে কীভাবে এনআইডি নিয়েছিলেন। আর এটি সার্ভারে দেখানোর পেছনে কারা জড়িত, তা শনাক্ত করা যাবে। মামলা হওয়ার পর ১৫ দিনে থানা-পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার ও দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। আর সিআইডির ১৫ দিনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই কেন, প্রশ্ন করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দৃশ্যমান না হলেও তদন্ত চলছে।

এনআইডি জালিয়াতির তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ইসির আইসিটি বিশেষজ্ঞ মো. শাহাবুদ্দিন গতকাল বিকেলে  বলেন, রোহিঙ্গা নারী লাকীর ভুয়া এনআইডিটি ইসির সার্ভারে কীভাবে দেখা যাচ্ছে, তা জানা যায়নি।