ক্লাবের নামে অপকর্ম মানা যায় না

শেখ মোহাম্মদ আসলাম
শেখ মোহাম্মদ আসলাম

ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে খেলার পরিবেশ অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কারণটা জানাই। ক্লাবের নজর আর খেলার উন্নয়নে নেই। বেশির ভাগ ক্লাবই এখন জুয়া, ক্যাসিনোর আড্ডাখানা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এটা বিশাল এক বিপৎসংকেত। তাই ক্লাবপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দেখে আমি ভীষণ খুশি। অন্তত দেরিতে হলেও ক্রীড়াঙ্গন থেকে এসব অনাচার দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভিক্টোরিয়া ফুটবল দলে খেলার সময় আমি দেখেছি, সপ্তাহে একটা দিন হাউজি খেলা হতো। তাতে আমাদের একটু কষ্ট হতো। তবে দলের স্বার্থে আমরা তা 

মেনে নিতাম। কারণ, তখন ক্লাবগুলোর নুন আনতে পান্তা ফুরোত। হাউজির মাধ্যমে ক্লাব কিছু টাকা আয় করত। বিকেল থেকে রাত আটটা–নয়টা পর্যন্ত আমরা ক্লাবের বাইরে ঘুরেটুরে আবার চলে আসতাম। ওই সময়টায় হাউজিটা হয়ে যেত কোনো সমস্যা ছাড়াই। তখন মূলত এই হাউজি খেলাটাই হতো।

এটা জানাই, ক্লাবের আয়ের একটা উৎস হাউজি আর জুয়া। এগুলো আগে ছিল, এখনো আছে। তবে আগে ক্লাবে এগুলো হলে সেভাবে টের পাওয়া যেত না। এখন মহা আয়োজন। তা ছাড়া আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি হচ্ছে। অনেক ক্লাবে ২৪ ঘণ্টা চলে এসব। কোনো রাখঢাক নেই। তাই ক্লাবে ক্লাবে চরম অসুস্থ একটা পবিবেশ দেখা যাচ্ছে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।

নৈতিকার চরম বিপর্যয় না হলে এতটা অধঃপতন হয় না। আমরা কোথায় চলেছি, সেই প্রশ্ন এখন আসছে। খেলাধুলা সুস্থজীবন গড়তে সহায়তা করে। এ কারণেই ক্লাবের প্রয়োজন। কিন্তু ক্লাব অনৈতিক কাজ করতে থাকলে এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু নেই। আসলে বড় সমস্যাটা হয়েছে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকের অভাব। আমাদের সময় ভালো ভালো সংগঠক ছিলেন। তাঁরা খারাপ চিন্তা করতেন না। তাঁদের আদর–ভালোবাসায় আমরা খেলেছি। এক বেলা ভালো খেতে দিলেই আমরা খুশি হতাম। এখন ভালো সংগঠকের অভাব ক্লাব সংস্কৃতিতে কালি ছিটিয়ে দিচ্ছে। সুন্দর পরিবেশটা কলুষিত করেছে। নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

এখন অনেক ক্লাবই নিয়ম রক্ষার জন্য কোনো রকমে খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে। একসময় ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারী, দিলকুশা—এসব দল খেলার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে। এখন আর করছে না। অবিশ্বাস্য লাগছে, বঙ্গবন্ধু খেলেছেন এমন ক্লাবও কীভাবে এসব অপরাধে যুক্ত! এগুলো এত দিন বিনা বাধায় কীভাবে হলো, সেটাও একটা প্রশ্ন।

আমরা যখন খেলতাম, ক্লাবগুলো বিভিন্ন স্পনসরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। স্পনসরের টাকায় চলত। কিন্তু এখন খেলাধুলায় স্পনসর কমে গেছে। ক্লাব ঝুঁকে গেছে জুয়া, হাউজি বা হালের ক্যাসিনোর মতো সর্বনাশা পথে। ক্যাসিনো সংস্কৃতির জালে বন্দী হয়ে পড়েছে আমাদের ক্রীড়া ক্লাবগুলোর বেশির ভাগই। এসবের নিন্দা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

আমি চাইব এই অভিযান অব্যাহত থাকুক। ক্রীড়াঙ্গনে যত অনিয়ম আছে, সব দূর হোক। ক্লাবগুলো খেলার উন্নয়নের কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। খেলোয়াড় তৈরিতে তারা ভূমিকা রাখবে, সেটাও চাই। একসময় ছোট ছোট ক্লাব অনেক বড় খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে। সেই দিন ফিরে আসুক। ক্লাবের নামে এসব অপকর্ম মেনে নেওয়া যায় না। সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

লেখক: জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক স্ট্রাইকার