এরপর কোন নেতা, আ. লীগে আতঙ্ক

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

এরপর কোন নেতা বা কোন সংগঠন লক্ষ্যবস্তু হবে—এই আতঙ্ক আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে। কেউ কেউ জানার চেষ্টা করছেন, এই অভিযানের বিস্তৃতি কত দূর। অভিযুক্তদের কোনো তালিকা আছে কি না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে, তাঁদের অনেকেই এখন নিরাপদ অবস্থান নিয়েছেন। খুব বেশি প্রকাশ্য হচ্ছেন না। কেউ কেউ নিজেদের পরিচিত বড় নেতাদের কাছ থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন, এই অভিযান আসলেই কতটা সিরিয়াস। ঢাকার বাইরেও অভিযান চলবে কি না, এমন জিজ্ঞাসাও করছেন কেউ কেউ। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কোন পর্যায়ের দুর্নীতি, কাদের দুর্নীতি, কত দিন চলবে—বিষয়টি কারও কাছেই খোলাসা করেননি প্রধানমন্ত্রী। তাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র। প্রথম দফায় ছাত্রলীগকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এরপর এখন যুবলীগ নেতারা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। ফলে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-সাংসদ বা জেলা পর্যায়ের নেতারা যে লক্ষ্যবস্তু হবেন না—এর নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। ওই সূত্র জানায়, প্রথমে জুয়ার আসর বা ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়েছে। এরপর হয়তো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা জমি দখল, মাদক ব্যবসা—এসব বিষয় চলে আসবে।

গতকাল শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, শুধু ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নেতারাই নজরদারিতে আছেন তা নয়, মূল দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যাঁরা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপকর্মে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

>

আ.লীগেও নজরদারি
নেতাদের অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন—এ আলোচনা দলের ভেতরেই।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, দলের ও সহযোগী সংগঠনের কেউ কেউ দৈত্য হয়ে গেছেন। রাজধানীসহ সারা দেশে কিছু নেতার শুধু উত্থানই হয়েছে, পতন হয়নি। তাঁরা টাকা দিয়ে দলের সব স্তরে এমনভাবে জাল ফেলেছেন, এখনই রাশ টেনে না ধরলে দল বিপদে পড়বে। এসব নেতাকে ছেঁটে ফেললে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। হয়তো কিছু কিছু নেতার ব্যক্তিগত ক্ষতি হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন দাবি, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নিজ পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। ওই দিন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে মানুষের। কিন্তু এগুলো আলোচনা হচ্ছে না। শুধু সরকারের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই মানুষ বেশি আলোচনা করছে। এমনকি দলের নেতাদেরও একটা বড় অংশের ধারণা জন্মেছে যে কিছু কিছু নেতা দ্রুত আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। কিন্তু সাধারণ নেতা-কর্মীরা সরকার ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসী এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর হাতে দমন করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে কে দলের আর কে দলের বাইরের, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আর কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে আতঙ্কিত হতেই পারে।