'প্রথম আলো তারুণ্যের পত্রিকা'

‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ শীর্ষক সুধী সমাবেশের মঞ্চে বিশিষ্টজনেরা। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা
‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ শীর্ষক সুধী সমাবেশের মঞ্চে বিশিষ্টজনেরা। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা

প্রথম আলো অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। মাদক নির্মূল, শিক্ষার প্রসার এবং নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে প্রথম আলো। এটি ভিন্নমাত্রার সংবাদপত্র। মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র নিয়ে প্রথম আলো সাহসী লেখালেখি করে। সংবাদপত্রটির কাছে মানুষেরও চাহিদা বেড়েছে। আসলে প্রথম আলো সংবাদপত্রের বাইরে একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

বগুড়ায় ‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ শীর্ষক সুধী সমাবেশে শনিবার বিকেলে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বগুড়ার সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পেশাজীবী অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। শহরের জামিলনগর এলাকার করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটরিয়ামে শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ। এরপর প্রদর্শিত হয় প্রথম আলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মিত ‌‘ভালোর সাথে, আলোর পথে’ তথ্যচিত্রটি। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গড়া পদ্মাপারের (রাজশাহীর চরখিদিরপুর) ‘আলোর পাঠশালা’ নিয়ে তৈরি করা একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা বেগম। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা
সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা বেগম। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা

এরপর বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাঠক না থাকলে সংবাদপত্র থাকবে না। পাঠকেরাই একটি পত্রিকার প্রাণ। শেষ বিচারে পাঠকই রাজা, পাঠকই সব। পাঠক বিজ্ঞাপন দেন বলে আমরা আয় করতে পারি। তাঁরা আমাদের কাছে আছে বলেই আমরা কথা বলতে পারি। পাঠক কাছে আছে বলেই প্রথম আলো বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে। যদি তাঁরা কাগজ না কেনেন, তাহলে প্রথম আলো শেষ।’

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘পাঠকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের অনলাইন চলছে। প্রথম আলো অনলাইন দেশের বাংলা সাইটের মধ্যে এক নম্বর। প্রতিদিন ২০০টির বেশি দেশ থেকে অনলাইন পড়েন ১০ লাখ পাঠক। প্রথম আলোর ফেসবুকে যুক্ত রয়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ পাঠক। ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার ১৪ লাখ। বিদেশের পাঠকেরাও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান। অনলাইনের পাঠকও পরের দিনে ছাপা পত্রিকা পড়তে চায়। ঘটনার পেছনের খবর জানতে চায়। তার মানে ছাপার কাগজ সত্য, গ্রহণযোগ্য।’

প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, ‘তরুণদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে; জানার জন্য, আলোচনায়, তর্কে-বিতর্কে, বিজ্ঞানে—সব ক্ষেত্রে। এখন প্রযুক্তি ছাড়া দুনিয়া অচল। এই কারণে আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খুব ভালো করছে। এটি কিন্তু ভবিষ্যৎ। আমাদের ছেলেমেয়েরা এসব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে ভালোভাবে চাকরি করছে। আমাদের দেশে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এর গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যাবে।’

‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ শীর্ষক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা
‘পাঠকের মুখোমুখি প্রথম আলো’ শীর্ষক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা

দেশ কলকারখানা, ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। কৃষিক্ষেত্রে অবদানের কথা উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করেছে কৃষিক্ষেত্রে। ধান উৎপাদনে বিশ্বের ৩ নম্বর স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সবজি ও মাছ উৎপাদনেও এগিয়ে গেছে।

বিশেষ বক্তা হিসেবে দৈনিক করতোয়া পত্রিকার সম্পাদক ও বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্র অনেক সংকটের মধ্যে রয়েছে। বিজ্ঞাপন কমে গেছে। সরকারি বিজ্ঞাপন অনলাইনের কারণে বেশি পাওয়া যায় না। উৎপাদন খরচের চেয়ে অর্ধেক দামে পাঠকদের কাছে পত্রিকা দিতে হয়।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, দেশের কাছে প্রত্যেকের ঋণ রয়েছে। এই ঋণের জায়গা থেকে সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাফল্যের কথা বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে।

কবি ও প্রাবন্ধিক বজলুল করিম বাহার বলেন, প্রথম আলো তরুণদের পত্রিকা, তারুণ্যের পত্রিকা। প্রথম আলো তরুণদের এগিয়ে নিতে পারে। প্রথম আলোতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে লেখা ছাপা হয়। তবে এর মধ্যে সব বিষয় উঠে আসে না। প্রযুক্তির অন্য বিষয়গুলো থাকতে হবে। প্রথম আলোকে শিশুবান্ধব ভূমিকাও পালন করতে হবে।

সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার রুহল আমিন। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা
সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার রুহল আমিন। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কিশোর আলো ও বিজ্ঞান চিন্তা দিলে উপকার হবে শিক্ষার্থীদের। কিশোর আলোর নৈতিক শিক্ষায় আলোকিত হয়েছে অনেকে।

পাঠক মতামতের শুরুতে জাতীয় কবিতা পরিষদের বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সিকতা কাজল প্রথম আলোর সাহিত্য পাতা আরও বড় পরিসরে করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তরুণদের কবিতা প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি।

করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে প্রথম আলো আর করতোয়া পত্রিকা পড়লে মন ভালো হয়। প্রথম আলো মাদক নির্মূলে আরও বেশি বেশি সংবাদ দিতে পারে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না। ২১ সেপ্টেম্বর, বগুড়া। ছবি: সোয়েল রানা

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষিবিজ্ঞানী এ কে এম জাকারিয়া ইসলাম, বগুড়া জেলা শাখা সনাকের সভাপতি মাসুদার রহমান হেলাল, বগুড়ার পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমীন, সংস্কৃতিকর্মী সাদিকুর রহমান, বগুড়া জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না, বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো বগুড়া জেলার কর্মকর্তা হোসনে আরা মনি, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সারিয়াকান্দি চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী, সংস্কৃতিকর্মী নিভা রানী সরকার পূর্ণিমা, আবদুল খালেক, কামরুন্নাহার, আদিবাসী বিষয়ে গবেষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বিশাল বাংলা বিভাগের প্রধান তুহিন সাইফুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ এবং প্রথম আলো সার্কুলেশন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক অরূপ কুমার ঘোষ। অনুষ্ঠানে বগুড়া বন্ধুসভার সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক সাবরিন সামান্তা গান পরিবেশন করেন।