চিকিৎসা ও আইনি পরামর্শের জন্য ঢাকায় আয়শা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবী জেড আই খানের চেম্বারে আয়শা সিদ্দিকা। ছবি: সাজিদ হোসেন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবী জেড আই খানের চেম্বারে আয়শা সিদ্দিকা। ছবি: সাজিদ হোসেন

চিকিৎসা নিতে এবং আইনি পরামর্শের জন্য ঢাকায় এসেছেন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ৭ নম্বর আসামি ও রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবী জেড আই খানের চেম্বারে বাবার সঙ্গে আসেন তিনি।

আইনজীবী জেড আই খান বলেন, আয়শার বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তা মনগড়া। এতে মূল আসামিদের অব্যাহতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। জজ মিয়া ও জাহালমের মতো আরেকটি কারবার হয়েছে এখানে।

আইনজীবী জেড আই খান বলেন, ‘চার্জশিটের ব্যাপারে আগেই বলেছি, এটা মনগড়া উপন্যাস। মূলত মূল আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য এ ধরনের কারবার করা হয়েছে। নাথিং নিউ। জজ মিয়া ও জাহালমের আরেকটি সংস্করণ।’

আয়শার জবানবন্দি ও তা প্রকাশ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জবানবন্দি আরেকটি উপন্যাস, যেটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সুন্দর করে লেখা, যা চিন্তার বাইরে।’ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রকাশ ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খানের সঙ্গে দেখা করা ও আইনি পরামর্শ নেওয়া। তিনি অভিযোগ করেন, দ্বিতীয়ত আয়শা অসুস্থ তাঁকে রিমান্ডের নামে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তিনি সেই ভয়াবহতায় ভুগছেন। তাঁর বাবার অভিযোগ, আয়শাকে মারধর করা হয়েছে। জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেব। আয়শার চিকিৎসা প্রয়োজন।

গতকাল শনিবার বিকেলে মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন আয়শা।

৩ সেপ্টেম্বর বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আয়শা জামিনে মুক্তি পান। আয়শাকে জামিন দিয়ে গত ২৯ আগস্ট রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, আয়শা তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন। গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ২ সেপ্টেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার’ দেন। চেম্বার বিচারপতির ওই আদেশের ফলে আয়শাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকে। 

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর ওই দিন বিকেলে মারা যান রিফাত শরীফ। পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শাকে।

কিন্তু আয়শার শ্বশুর মামলা দায়েরের ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত, এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। সংবাদ সম্মেলনের পরদিন আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তব্য দেন। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে পুলিশ ৩ জুলাই গ্রেপ্তার দেখায়।