১০ লাখ টাকা জোগাড় করতে কলেজছাত্রকে হত্যা, বলছে পুলিশ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিরাজুল ইসলামকে ১০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকা জোগাড়ের জন্য তিনি রাজু আহম্মেদ (২২) নামের এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করে হত্যা করেন। তারপর ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করলেন। পুলিশ ফোনকলের সূত্র ধরে সিরাজুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পাবনার কর্মকর্তারা আজ রোববার এসব কথা জানান।

কলেজছাত্র রাজুর বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে। তিনি পড়তেন জেলা শহরের সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। থাকতেন শহরের রাধানগর মহল্লার একটি ছাত্রাবাসে।

১৮ সেপ্টেম্বর পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিল থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পাবনা জেলা কার্যালয় তদন্ত শেষে আজ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম (৩৫) ও শামসুল প্রামাণিক (৩৩) নামের অপর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের দুজনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দত্ত খারুয়া গ্রামে।

পিবিআই পাবনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর ছাত্রাবাস থেকে রাজু আহম্মেদ নিখোঁজ হন। পরদিন তাঁর (রাজুর) মুঠোফোন থেকে পরিবারের কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর রাজুর বাবা লোকমান প্রামাণিক পাবনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিন বিকেলে ভাঙ্গুড়া উপজেলার একটি বিল থেকে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে। পরে ২০ সেপ্টেম্বর ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। পিবিআই কর্মকর্তারা এদিন থেকেই অপহরণকারী চক্রকে খুঁজতে মাঠে নামেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পাবনা কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন জানান, মুক্তিপণ দাবি করে মুঠোফোন থেকে করা ফোনের সূত্র ধরেই তদন্তকাজ শুরু হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যার একটি ক্লু মেলে। সে সূত্র ধরেই প্রথমে সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে শামসুল প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

এসআই ফরহাদ হোসেন আরও জানান, গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম নিহত রাজু আহম্মেদের পূর্বপরিচিত ছিলেন। ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি রাজুকে ছাত্রাবাস থেকে বাইরে ডেকে আনেন। এরপর পাওনা টাকা আদায়ে সহযোগিতা করার কথা বলে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। অন্ধকার নেমে এলে সিরাজুল ইসলাম নিজ বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে রাজুকে নিয়ে ট্রেনে করে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশা স্টেশনে যান। সেখানে আগে থেকেই নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন শামসুল প্রামাণিক। এরপর তাঁরা রাজুকে নৌকায় তুলে বিলের মাঝখানে নিয়ে যান। সেখানে দুজন মিলে রাজুর গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ বিলে ফেলে দেন। পরে রাজুর মুঠোফোন থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করতে থাকেন। এর দুই দিন পর তাঁরা মুঠোফোনটি পানিতে ফেলে দেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যার পুরো পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন। সিরাজুল ইসলাম ১০ লাখ টাকার ঋণ শোধ করতে এই পরিকল্পনা করেন বলে জানিয়েছেন।