লাভের আশায় টাকা দিয়ে নিঃস্ব তাঁরা

টার্কি মুরগি পালনে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে খামারিদের বিনিয়োগের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রংধনু শপিং লিমিটেড, স্বপ্নতরী অ্যাগ্রো সার্ভিসেস লিমিটেড ও স্বপ্ননীল অ্যাগ্রো সার্ভিসেস নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েক শ মানুষকে মুনাফা দেওয়ার কথা বলে টার্কি মুরগি পালনে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। কিন্তু এরপর বিনিয়োগ ও মুনাফার টাকা না দিয়েই প্রতিষ্ঠান তিনটির কর্মকর্তারা ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে পালানোর সময় গত ৭ মে স্বপ্ননীল অ্যাগ্রো সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালমান ওরফে সানি, তাঁর স্ত্রী ও ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হন রংধনু শপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল রায়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জানান, তিনটি প্রতিষ্ঠানই একই কৌশলে প্রতারণা করে। ২০১৭ সালে তারা ঠাকুরগাঁও এবং এর আশপাশের এলাকায় এরিয়া ব্যবস্থাপক, উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ও ফিল্ড অর্গানাইজার নিয়োগ করে তাদের কার্যক্রমের কথা প্রচার করে। তখন বলা হয়, বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের টার্কির বাচ্চা সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠান। খাবার ও চিকিৎসা খরচও বহন করবে তারা। ৯০ দিন পালনের পর প্রতিষ্ঠান টার্কি ফেরত নেবে। সঙ্গে উদ্যোক্তাদের প্যাকেজ নেওয়ার সময় বিনিয়োগ করা মূল টাকা ও এর ৮০ শতাংশ মুনাফা দেবে। কিন্তু লাভের টাকা তো দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকাও ফেরত দেয়নি।

২০১৮ সালে জমি বিক্রির ১ লাখ ২ হাজার টাকা দিয়ে রংধনু শপিং লিমিটেডের কাছে থেকে প্যাকেজ কিনেছিলেন পীরগঞ্জের কলিযুগ গ্রামের কৃষক কালিকান্ত রায়। তিনি বলেন, প্যাকেজের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান টার্কির বাচ্চা সরবরাহের পর তাঁকে শুধু দেখভাল করতে হবে। মেয়াদ শেষে কোম্পানি তাঁকে ৮১ হাজার ৬০০ টাকা লাভসহ ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা দেবে। কিছুদিন পর ৪ লাখ ২১ হাজার টাকায় আরেকটি কিনতে উৎসাহিত করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এবার টাকা জমা দিলেও টার্কি সরবরাহ করতে টালবাহানা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে অফিসে গেলে দেখা যায় সবাই পলাতক। 

২৫ আগস্ট এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় প্রতারণার মামলা করেন কালিকান্ত রায়। তিনি বলেন, ‘কিছু টাকা বেশি লাভের আশায় জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করি। লোভটাই এখন আমাকে নিঃস্ব করে দিল।’ 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারণার অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।