এক যুগ ধরে শিকলে বন্দী রানীনগরের আসলাম

আসলাম সাকিদার
আসলাম সাকিদার

নওগাঁর রানীনগরে প্রায় এক যুগ ধরে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে আসলাম সাকিদার (৩৮) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে। আসলাম মুক্ত থাকলে অন্যের ক্ষতি করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় তাঁকে এভাবে বন্দী রেখেছে তাঁর পরিবার।

আসলাম উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের মুনি সাকিদারের ছেলে।

আসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই আসলামের মধ্যে মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। পরে তাঁর পরিবার চিকিৎসার জন্য এলাকার বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজের দ্বারস্থ হয়। এতে আসলামের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দিন দিন তাঁর অত্যাচার বেড়ে যায়। অনেক সময় লোকজনকে মারধর করতে থাকেন। পরে বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে আসলামের হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে বন্দী করে রাখেন তাঁর পরিবারের লোকজন।

একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদরের এক মানসিক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় তিন বছর চিকিৎসার পর আসলাম কিছুটা সুস্থ হন। তিনি অনেকটা সুস্থ জীবনযাপন শুরু করলে পরিবারের লোকজন বছরখানেক পর আসলামকে বিয়ে দেন। একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয় তাঁর সংসারে। কিছুদিন পর আসলাম আবার আগের মতো আচরণ শুরু করেন। এ অবস্থায় আর্থিক সংকটে পরিবারের সদস্যরা তাঁর চিকিৎসা বন্ধ রাখেন। পরে তাঁর পরিবারের লোকজন আসলামের পায়ে শিকল পরিয়ে দেন। পরিবারে পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে আসলাম সবার ছোট। আসলামকে রাতে বাড়ির বারান্দায় এবং সকালে বাড়ির পাশে খেজুরগাছের সঙ্গে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। সেখানেই খাবার দেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে আসলামের শিকলবন্দী জীবন। পরিচিত লোকজন তাঁকে দেখতে এলে অনেক সময় সুন্দর করে কথা বলেন আসলাম।

আসলামের বাবা মুনি সাকিদার (৭৫) ও বড় ভাই মেছের আলী বলেন, ‘সামর্থ্য না থাকায় তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত আসলামের বন্দিদশা দেখতে হচ্ছে আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘সম্প্রতি ভবানীপুর থেকে একজনকে উদ্ধার করে আমরা চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আসলামের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’