ওরা স্কুলে যায় সরকারি বাইসাইকেলে চেপে

পাহাড়ি এলাকার উঁচু–নিচু পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জাম্বুরাছড়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পাহাড়ি এলাকার উঁচু–নিচু পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জাম্বুরাছড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

স্কুল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম বিদ্যাবিলে থাকে বৈশাখী তংলা। আগে হেঁটেই প্রতিদিন স্কুলে আসত বৈশাখী। খুব কষ্ট হতো, স্কুলে সময়মতো পৌঁছাতেও পারত না কোনো দিন। প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিতও থাকত।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রানার উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখী এখন রোজ স্কুলে আসে। এ বছর সরকারের কাছ থেকে একটি বাইসাইকেল পাওয়ায় তার স্কুলে যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হয়।

বৈশাখীর মতো ৫০ জন ছাত্রী এখন রোজ বাইসাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করে। গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে তারা এই বাইসাইকেল পেয়েছে। ফলে পাহাড়ি এলাকা থেকে সহজেই বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসছে তারা। পড়াশোনায় আগ্রহ বেড়েছে তাদের।

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মমতা তংলা বলে, ‘আগে হেঁটে বহু দূরের স্কুলে যেতাম। অনেক সময় দেরিতে স্কুলে পৌঁছালে স্যারদের বকা খেতাম। বাড়ি ফেরার পর খুবই ক্লান্ত হয়ে যেতাম। এখন সাইকেল পাওয়ায় আমাদের খুবই উপকার হয়েছে। আমরা সাইকেল নিয়ে দ্রুত স্কুলে যেতে পারি। সাইকেল চালাতেও ভালো লাগে।’ 

উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে দূরের শিক্ষার্থীরা দেরি করে আসত, স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। এখন সাইকেল নিয়ে তারা প্রতিদিনই স্কুলে আসে। বিশেষ করে উপজেলার বর্মাছড়া, সোনাছড়া, হরিণছড়া, বিদ্যাবিল এলাকার শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করত। এখন সাইকেল পাওয়ায় তাদের কষ্ট অনেক কমেছে। তবে পর্যায়ক্রমে যদি বাকি শিক্ষার্থীদের সাইকেল দেওয়া হয় তাহলে তাদেরও কষ্ট কমবে। পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়বে। 

রানার উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। সরকার থেকে বাইসাইকেল পাওয়ার পর তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্থিক সহায়তায় এ বছর শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৫০ জন ছাত্রীকে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েদের এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যাতে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত তারা সাইকেল ব্যবহার করে স্কুলে যাওয়া–আসা করতে পারে। 

সাতগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মাখড়িছড়া, মোছাই, গান্ধীছড়া আমরাইল চা–বাগান থেকে শিক্ষার্থীরা আসে। স্কুল থেকে দূরত্ব অনেক। চা–বাগানের দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা হেঁটে হেঁটেই স্কুলে আসে। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাইকেল পাওয়ার পর থেকে তাদের স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছে। আরও কিছু সাইকেল পাওয়া গেলে বাকিরাও খুশি হতো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন খাসিয়াপুঞ্জি ও চা–বাগান থেকে হাইস্কুলগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করার আগেই ঝরে পড়ে। এখন সাইকেল পাওয়ার পর মেয়েরা উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এর ফলে ঝরে পড়ার পরিমাণ কমে আসবে। পর্যায়ক্রমে সব মেয়েদের এ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হবে।