'স্যার আমি আমার স্বামীকে খুন করেছি'

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

‘স্যার আমি আমার স্বামীকে খুন করেছি’—ফোনের অপর প্রান্তের নারীকণ্ঠ শুনে প্রথমে পাগল ভেবেছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক ভূষণ চন্দ্র বর্মণ। ঘটনার আকস্মিকতা কাটে ওই নারী আরেক ব্যক্তিকে ফোন ধরিয়ে দিলে। ওই ব্যক্তি জানান, ‘ঘটনা সত্যি’।

গতকাল রোববার রাত পৌনে চারটার দিকে স্বামীকে হত্যার কথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন করেন মালেকা বেগম (২৮) নামের এক নারী। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়বালিয়া বগুড়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী তাঁর গলা চেপে ধরলে কাঠ কাটার লোহার যন্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে জানান মালেকা বেগম।

নিহত স্বামীর নাম শরিফুল ইসলাম (৪০)। মালেকা তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায়।

পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পাশাপাশি বাড়ির শরিফুল ও মালেকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে শরিফুল মালেকাকে বিয়ে না করে ২০০৬ সালে শরিফা বেগম নামে অপর এক নারীকে বিয়ে করেন। শরিফুলের বিয়ের ছয় মাস পর খোঁচাবাড়ি এলাকায় মালেকারও বিয়ে হয়ে যায়। ২০০৮ সালে শরিফা মারা গেলে শরিফুল ঝরনা বেগম নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের কিছুদিন পর শরিফুল ও মালেকার মধ্যে আবার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১২ সালে মালেকা তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়ে শরিফুলের কাছে চলে আসেন। পরে তাঁরা বিয়ে করেন।

এ বিয়ে শরিফুলের দ্বিতীয় স্ত্রী ঝরনা বেগম মেনে নিতে পারেননি। সম্প্রতি তিনি স্বামী শরিফুলের নামে থানায় নারী নির্যাতনের একটি মামলা করেন। ঝরনার মামলার পর মালেকাও শরিফুলের বিরুদ্ধে যৌতুকের আরেকটি মামলা করেন। এসব নিয়ে শরিফুলের সংসারে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চলছিল। বিয়ে করলেও মালেকা তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন। সম্প্রতি মালেকাকে বাড়ি থেকে পরিবারের লোকজন বের করে দিলে তিনি বগুড়াপাড়া এলাকায় শফিকুল আলম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতে শরিফুলের যাতায়াত ছিল।

গতকাল দিবাগত রাতে মালেকার ভাড়া বাড়িতে যান শরিফুল। ওই সময় একই সঙ্গে দুইটি সংসার চালানো নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে রাত তিনটার দিকে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাতাহাতির একপর্যায়ে মালেকা বাসিলা দিয়ে শরিফুলের মাথায় আঘাত করলে তিনি বিছানায় পড়ে যান। মালেকা এরপর তাঁর মাথায় আরও কয়েকটি আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই শরিফুলের মৃত্যু হয়।

শরিফুলের মৃত্যুর পর মালেকা ঘটনাটি মুঠোফোনে ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভূষণ চন্দ্র বর্মণকে জানান।

এসআই ভূষণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে মুঠোফোনটি বেজে ওঠে। মালেকা নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন,“স্যার আমি আমার স্বামীকে খুন করেছি।” প্রথমে মালেকাকে পাগল ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে মালেকা তাঁর বাড়ির মালিকের সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেন। বাড়ির মালিকের কাছ থেকে খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্যারকে জানাই। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ এবং মালেকাকে আটক করে।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুর এ আলম ছিদ্দিকি বলেন, শরিফুলের মাথায় কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি (তদন্ত) চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেকা তাঁর স্বামী শরিফুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে স্বামীকে হত্যা প্রসঙ্গে মালেকা বেগম বলেন, ঝগড়ার একপর্যায়ে শরিফুল তাঁকে মেরে ফেলতে গলা চেপে ধরেছিলেন। তিনি নিজেকে বাঁচাতে হাতের কাছের বাসিলা দিয়ে শরিফুলকে কয়েকটি আঘাত করলে তিনি মারা যান।