ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রদলের ওপর হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। হামলায় সংগঠনের ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে থাকা এক সাংবাদিককে মারধর করে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে ছিনেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন৷ তবে সনজিত দাবি করেন, হামলার বিষয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা ছিল না৷

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জানান, নেতা-কর্মীদের নিয়ে সকালে মধুর ক্যানটিনে গিয়েছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন৷ সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অব্যাহত হট্টগোলের পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বরে গিয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে করে সেখানে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হাকিম চত্বরে আগেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। সনজিত ও তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলেন। সনজিতের কথায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় চলে যান। সেখানে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নেতা-কর্মীদের বিদায় দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তেই সনজিতের অনুসারী ৫০-৬০ জন নেতা–কর্মী রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান, কবি জসীমউদ্‌দীন হল সংসদের জিএস ইমাম হাসান, জগন্নাথ হল সংসদের জিএস কাজল সরকার, সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাইসুল ইসলাম, স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী আপেল মাহমুদ, কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী মুহসীন আলম তালুকদারসহ অনেকে হামলায় অংশ নেন৷

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র (লাঠি, রড, চাপাতি, রামদা) নিয়ে আমাদের ওপর বিনা উসকানিতে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় আমাদের ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মী আহত হন, যাঁদের ৭-৮ জনের অবস্থা গুরুতর। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশে ও নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এমনকি আমাদের অনেকের মোবাইল ও মানিব্যাগ পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে৷’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার বিচার ও ছাত্রলীগের নেতা সনজিতের গ্রেপ্তার দাবি করেন ইকবাল হোসেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ইকবাল হোসেনের অভিযোগ অনুযায়ী, ছাত্রদলের আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী খোরশেদ আলম সোহেল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল সংসদে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী মাহবুবুল আলম শাহিন, ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী কার্জন মাসুম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাকিউল ইসলাম শাহীন, সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রদলের নেতা ফিরোজ আলমসহ ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিটের ৪০ নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে ৭-৮ জনের অবস্থা গুরুতর।

এ ছাড়াও ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এলাকায় থাকা দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আনিসুর রহমান ও বিজনেস বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুরুল আফসারকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নুরুল আফসার তেমন গুরুতর আঘাত না পেলেও আনিসুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি আছেন৷

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের ভেতরে ছিলেন। তাঁর বা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কারও ওপর হামলার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অতি-উৎসাহী নেতা-কর্মীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন দাবি করে সনজিত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন৷

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে, তা আমাদের ব্যর্থতা বলে মনে করি। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা দুঃখিত৷’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। লিখিত অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’