তালিকায় রোহিঙ্গা ভোটার, জড়িত ইসির ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টায় নির্বাচন কমিশনের ১৫ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন অপরাধে চাকরিচ্যুত। আজ সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ভোটার তথ্যে সার্ভারের প্রেজেন্টেশন তুলে ধরে এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের মূল সার্ভার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। অনেকেই না জেনে বলছেন, ইসির সার্ভারে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইসির মূল সার্ভারে আগামী ২৪ জানুয়ারির আগে ঢোকার সুযোগ নেই। কেননা, আইন অনুযায়ী মূল সার্ভারে তথ্য সন্নিবেশ করার আগে ১ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর দাবি-আপত্তি নিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। আর ২৪ জানুয়ারির পর আবারও যাচাই করে মূল সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই চলমান হালনাগাদে রোহিঙ্গারা টেম্পোরারি সার্ভারে ঢুকেছে। ৬১ জনের মতো আমরা চিহ্নিত করেছি।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল বলেন, ‘আমরা ফাঁদ পেতে একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হই। সামরিক বাহিনীতে আমরা যেটা অ্যামবুশ বলি। এতে আমাদের ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের কর্মচারী জয়নালকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অন্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সংখ্যাটা ১৫ জনের অধিক হবে না।’

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁরা এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বেশির ভাগই ইসি থেকে আগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তাঁরা ইসির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সব উপজেলা কর্মকর্তা এবং যাঁরা আমাদের লোকবল সাপ্লাই দেন, তাঁদের বলেছি, আগে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা যেন ভোটার তালিকার কাজে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হতে না পারেন।’

ব্রিগেডিয়ার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা নির্দেশনা দিয়েছেন, জিরো টলারেন্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন। তাই আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা আগের যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটা দেখা হচ্ছে। আমরা চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের ওপর কঠোর নজরদারি চালানোর জন্যও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলব। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপচেষ্টায় যিনি জড়িত হোন না কেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। ফৌজদারি মামলা কিংবা বিভাগীয় মামলাও করব। এ ছাড়া অন্য যেকোনো সংস্থার কেউ যদি জড়িত থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনআইডি তথ্যভান্ডার সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমরা সব পদক্ষেপ নেব।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রবাসে যখন আমরা ভোটার করব, তখনো রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে আগে যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ রোহিঙ্গা আছেন কি না, সেটাও দেখা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যাতে রোহিঙ্গাদের টেম্পোরারি সার্ভারেও যুক্ত করতে না পারেন, সে জন্য সব কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিয়েছি। এ ছাড়া সার্ভারে ঢোকার জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) মেসেজের ব্যবস্থা করেছি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশনস) আবদুল বাতেন বলেন, ‘৬১ জনের মধ্যে আমাদের বিশেষ তদন্ত কমিটি একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। যাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের এক কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।’