রোহিঙ্গাদের এনআইডি: ইসির ৭ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের এনআইডি দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। আজ সোমবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। শিগগিরই অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে অনুসন্ধান শুরু হবে বলে জানিয়েছে দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধানের আওতায় আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৫১ জন রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওইসব পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট করেছে বলেও প্রমাণ মিলেছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাঁদের মধ্যে দুজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এঁরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা (বর্তমানে পাবনার নির্বাচন কর্মকর্তা) আব্দুল লতিফ শেখ। অন্যরা হলেন, ঢাকা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের (এনআইডি) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর, একই শাখার সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, চট্টগ্রামের পটিয়ার বড় উঠান ইউনিয়মের শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন।

এঁদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জয়নাল আবেদীন।

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ল্যাপটপসহ নির্বাচনের সরঞ্জাম আত্মসাতের অভিযোগ আছে।
দুদক বলছে, এনআইডি জালিয়াতির এ অভিযোগ প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান অনুবিভাগের মাধ্যমে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ, উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন ও মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে এক চিঠির মাধ্যমে অনুসন্ধানের অনুমতি চায়। দলটি তিনটি পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা প্রায় দেড়শ পাসপোর্ট আবেদনপত্রের নথি সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো এনফোর্সমেন্ট দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলেও নির্বাচন কমিশনের সবাই দায়সারা কাজ করেছেন। তারা এই অভিযানের আগ পর্যন্ত ল্যাপটপ হারানো সংক্রান্ত কোনো জিডি বা মামলা এবং ল্যাপটপ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস কোতোয়ালী থানায় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বাদী হয়ে জেলার সদর থানায় ভোটার তালিকায় ৬০০ রোহিঙ্গাদের নাম উঠানোর অভিযোগে মামলা করেন। কোতোয়ালী থানায় করা মামলায় পাঁচ কর্মচারীকে আসামি করা হয়।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট দলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই মামলা লোকদেখানো এবং দায়িত্ব এড়ানোর কৌশলমাত্র। এনফোর্সমেন্ট দলের কাছে স্পষ্টভাবে মনে হয়, হাতেগোনা কয়েকজন কর্মচারীর পক্ষে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন বলে রেকর্ডপত্রের প্রাথমিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশনের সার্ভারে তথ্য সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ ছাড়াও ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন, আইরিশ মেশিন, ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডসহ এনআইডিতে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো কোনো কর্মচারীর কাছে থাকার কথা নয়। কর্মকর্তাদের কাছে ওইসব যন্ত্রপাতি থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ল্যাপটপ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যহারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। দুদককে পাশ কাটানোর জন্য দায়সারা মামলা করে জড়িত কর্মকর্তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।