নওগাঁয় বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

নওগাঁর নিয়ামতপুরে উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এর আগে, গত রোববার বিকেলে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের খড়িবাড়ী হাটে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ওয়াহেদ আলীসহ উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হন।

নিহত বিএনপি নেতার নাম ওয়াহেদ আলী (৪০)। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে ওয়াহেদ আলীর নেতৃত্বে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীদের নিয়ে কর্মিসভা চলছিল। সভা চলার একপর্যায়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হোসেন কর্মী-সমর্থক নিয়ে ওই সভায় উপস্থিত হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সাতজন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ওয়াহেদ আলীসহ কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় রোববার বিকেলেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্যরা নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল ৭টার দিকে ওয়াহেদ আলীর মৃত্যু হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপি দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়ে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সাংসদ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছালেক চৌধুরী এবং আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। গত ১০ আগস্ট ইছাহাক আলী সরদারকে আহ্বায়ক করে উপজেলা বিএনপির ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে ছালেক চৌধুরী পক্ষের নেতা-কর্মীরা ১৬ আগস্ট মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। ২২ আগস্ট মোস্তাফিজুর রহমান নেতা-কর্মী নিয়ে উপজেলা সদরে সভা করার সময় ছালেক চৌধুরী পক্ষের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান। আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে সর্বশেষ রোববার বিকেলে উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে।

নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, ‘বাহাদুরপুর ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় থানায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় বিএনপির ছাদরুল আমীন চৌধুরী বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১০ থেকে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রোববার বিকেলে পূর্বনির্ধারিত কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত হওয়ার আগেই ছালেক চৌধুরীর নির্দেশে ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা মামলা করব।’

বারবার ফোন দিলেও ছালেক চৌধুরীর মুঠোফোনে নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ছালেক চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাদরুল আমীন চৌধুরী দাবি করেন, ‘ ওই সভায় অতিথিরা উপস্থিত হওয়ার আগেই মোস্তাফিজুর রহমানের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এতে আমাদের চার-পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে রোববার সন্ধ্যায় থানায় একটি অভিযোগ করেছি।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলায় দুই পক্ষের মারামারি ঘটনায় একজন বিএনপি নেতার মারা যাওয়ার ঘটনাটি দলের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’