লুডু খেলায় বিরক্ত করায় ছাত্রকে লাঠিপেটা

শিক্ষক নাঈম আহমেদ (৩২) তিন সঙ্গী নিয়ে লুডু খেলছিলেন। এমন সময় প্রথম শ্রেণির ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন (৭) তাঁকে বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করে। শিক্ষকের সাড়া না পেয়ে আবারও ডাক দেয় মোজাম্মেল। এতেই শিক্ষকের রাগ সপ্তমে ওঠে। মোজাম্মেলকে ধরে বেধড়ক লাঠিপেটা করেন শিক্ষক নাঈম। পেটানোর সময় আঘাত লাগে মোজাম্মেলের চোখেও। এ ঘটনার পর এখন মোজাম্মেলের চোখ হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঘটনার এমনই বিবরণ উঠে এসেছে মোজাম্মেল হোসেনের বাবার করা মামলার এজাহারে। হবিগঞ্জ সদর থানায় আজ সোমবার মামলাটি করা হয়েছে।

আহত মোজাম্মেল হোসেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে। সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিরথান হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।

মোজাম্মেলকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হোসেন মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থেকেই পড়াশোনা করে। গত শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নাঈম আহমেদসহ চারজন মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে লুডু খেলছিলেন। এ সময় মোজাম্মেল শিক্ষক নাঈমকে ডাকাডাকি করলে তিনি বিরক্ত হন। এরপর মোজাম্মেলকে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটান। এ সময় মোজাম্মেলের চোখে আঘাত লাগে। তবে ঘটনাটি শিক্ষক নাঈম গোপন রাখেন।

মোজাম্মেলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরদিন শনিবার শিক্ষক নাঈম আহমেদ শিশুটির বাড়িতে ফোন করে জানান, মোজাম্মেল রাস্তায় রিকশার নিচে পড়ে আঘাত পেয়েছে। খবর পেয়ে মোজাম্মেলের মা রেহানা আক্তার রোববার ছেলেকে দেখতে মাদ্রাসায় আসেন। তিনি ছেলের শরীরে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান, চোখ দুটিও ঠিকমতো মেলতে পারছে না। এ অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে তিনি বাড়ি যেতে চান। তবে প্রথম দিকে শিক্ষক নাঈম রাজি হচ্ছিলেন না। পরে রেহানা আক্তারের চাপাচাপিতে রাজি হয়ে যান। বাড়ি ফেরার পথে মোজাম্মেল সব ঘটনা মাকে খুলে বলে। পরে মোজাম্মেলকে রোববার সন্ধ্যায় বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা দেবাশীষ রায় বলেন, শিশুটির দুটি চোখেই রক্ত জমাট হয়ে আছে। শিশুটি জানিয়েছে, সে বাঁ চোখে দেখতে পাচ্ছে না। তার দুটি চোখের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির মা রেহানা আক্তার জানান, ছেলের চোখের বর্তমান অবস্থা দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা।

অভিযুক্ত শিক্ষক নাঈম আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় এ ঘটনায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুক আলী বলেন, শিশুটির বাবা আজ মামলা করেছেন। আসামি ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী হাবিবা আক্তারকে (৮) শিক্ষক নিরঞ্জন দাশ একটি বেত ছুড়ে মারলে মেয়েটির বাঁ চোখে গিয়ে লাগে।