জলবায়ু অর্থায়নে অঙ্গীকার পূরণ করুন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি উন্নত জাতিগুলোকে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে তাঁদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপে অর্থায়নের আহ্বান জানাব।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স কক্ষে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি কার্বন অনিঃসরণকারী দেশ এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং সামর্থ্যের স্বল্পতা থাকার পরও বাংলাদেশ স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অংশীদারত্বের অঙ্গীকার এমন একটি প্ল্যাটফর্মের সৃষ্টি করবে, যেখানে উদ্ভাবনী এবং অভিযোজনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তনের সহযোগিতামূলক বিভিন্ন কার্যপ্রণালি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।’

এই বৈঠক আয়োজনের জন্য নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবে আমাদের সভ্যতার ক্ষতি সাধন করছে।’

আগাম সতর্কতায় প্রাণহানি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদের কক্ষে স্থানীয় সময় গত সোমবার জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন ধ্বংসের মুখে পড়ছে। তবে বাংলাদেশে কার্যকর আগাম সতর্কবার্তা প্রক্রিয়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পানি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় মোকাবিলা করতে ৮২ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ সহ অভিযোজন ও সহনশীলতা তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, রিস্ক ইনফর্মড আর্লি অ্যাকশন পার্টনারশিপ (আরইএপি) চালু করতে পেরে তিনি খুশি। যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি উদ্ভাবিত এটি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নতুন পদক্ষেপ। তিনি বলেন, তিনি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন যে ৫০টির বেশি দেশ ও ২০টির বেশি সংস্থা এটি চালু করতে এই অংশীদারত্বে যোগ দিচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ দুর্যোগের কবল থেকে সারা বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে রক্ষা করাই হচ্ছে আরইএপির লক্ষ্য।

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে

এর আগে সোমবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলের প্ল্যানারি কাউন্সিলের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। 

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অপরিহার্য।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে অকালমৃত্যু তিন ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’