যিনি পড়ান তিনিই চালান পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম

সুন্দর ভবন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক নেই। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সৈয়দখারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
সুন্দর ভবন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক নেই। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সৈয়দখারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

যিনি পাঠদান করেন, তিনিই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালান। দাপ্তরিক কাজও সামলাতে হয় এক হাতেই। কারণ, বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কোনো লোকবল নেই।

এই অবস্থা সৈয়দখাঁরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থী আছে ৮৭ জন। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন জিসান আহমেদ।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, তিনি সৈয়দখাঁরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনবলসংকটের বিষয়ে অবগত আছেন। ওই বিদ্যালয়ের জন্য শিগগিরই অন্য স্থান থেকে আরেকজন শিক্ষক প্রেষণে আনা হবে।

২০১৩ সালে ‘বিদ্যালয়হীন এলাকায় ১৫০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর অধীনে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে দেড় হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সৈয়দখাঁরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদ রয়েছে। কিন্তু এখন প্রধান শিক্ষক ছাড়া এখানে সব পদই শূন্য। সহকারী শিক্ষক, অফিস সহকারী ও নৈশপ্রহরী নেই।

বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরা বলছেন, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে একজন শিক্ষক থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক দাপ্তরিক কাজে মাঝেমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে যান। সেদিন পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ থাকে। মাঝেমধ্যে ক্লাস বন্ধ থাকায় দিন দিন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হারও কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষকসংকটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছে না তারা।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাত পারভীনের মা পারভীন আক্তার বলেন, স্কুল আর শিক্ষকই তাঁদের ভরসা। কারণ, তাঁদের পক্ষে প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব নয়। মাঝেমধ্যে ক্লাস বন্ধ থাকায় এবং একমাত্র শিক্ষক একসঙ্গে কয়েকটি ক্লাস নেওয়ায় লেখাপড়ার ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে।

এ বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ হোসেন, ২০১৭ সালের ৫ মার্চ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুব হোসেন প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হানিফ হোসেন, ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরদারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আউয়াল হোসেন প্রেষণে এসে কাজ করেছেন।

২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত উজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালাহ উদ্দিন, ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর ও ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসা. হাসিনা আক্তার এবং মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফৌজিয়া আক্তার ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে এখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে জিসান আহমেদ যোগদান করেন। পরদিনই তাঁকে বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৯ এপ্রিল তাঁকে গঙ্গাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে জিসান আহমেদকে আবার এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক জিসান আহমেদ বলেন, ‘এখানে শিক্ষক বলতে আমি একা। প্রশাসনিক কাজ করব, নাকি একসঙ্গে তিন-চারটা ক্লাস সামলাব? কোনোটাই ঠিকমতো করতে পারছি না।’