'আমার স্বামীরে ক্যান কোপাইয়া মারল?'

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

মাদারীপুরে পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের ১৫ জন। আজ বুধবার সকালে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ছোটবাড্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম শ্যাম দাস (৪০)। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে ছোটবাড্ডা গ্রামের শ্যাম দাস তাঁর পুকুরে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন। ওই পুকুরে অংশীদার দাবি করে প্রতিবেশী দিলীপ বালার সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দিলীপ তাঁর লোকজন নিয়ে শ্যামকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাথায় ও পেটে আঘাত করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শ্যাম দাস।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ছোটবাড্ডা গ্রামে একটি পুরোনো জমিদার বাড়ি আছে। সেই বাড়ির একটি পুকুর ও জমিজমা নিয়ে নিহত শ্যামের ভাই তারক দাসের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল দিলীপ ও কৃষ্ণ বালার। সেই বিরোধের জের ধরে খুন হন শ্যাম।

নিহত শ্যামের স্ত্রী সম্পা রানী দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীর কী দোষ ছিল? ওদের সাথে আমার স্বামী তো কোনো মারপিটে আগে যায়নি। তাইলে আমার স্বামীকে ক্যান কোপাইয়া মারল? আমার স্বামীর খুনিদের ফাঁসি চাই।’

নিহতের কাকাতো ভাই লক্ষণ দাস বলেন, শ্যামের তিন বছরের একটি ছেলে ও ৫ মাসের একটি মেয়ে আছে। ছেলেটা একটু পরপর কান্না করছে আর মেয়েটা এখনো ওর বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারল না।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন অভিযুক্তরা। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত দিলীপের দুই ভাইয়ের স্ত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তাঁরা হলেন হরিচান বালার স্ত্রী সন্ধ্যা বালা ও রণজিৎ বালার স্ত্রী মৌমিতা বালা। জানতে চাইলে আটকের আগে সন্ধ্যা বালা বলেন, ‘শ্যামের সঙ্গে সকালে পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়। পরে শ্যাম আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আমার মাথা ফেটে যায়। পরে আমার স্বামী ও দেবরদের সঙ্গে শ্যামদের মারামারি হয়। এরপর কে কোথায় আছে, আমি কিছুই জানি না।’

আজ বুধবার বিকেল ৪টার দিকে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শ্যাম নামের একজন খুন হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় এখনো নিহতের পরিবার মামলা করতে আসেনি। অভিযুক্তরা এলাকায় নেই। তারা ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। মামলা হলে আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করব।’