বশেমুরবিপ্রবির আরেক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আরেকজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তিনজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করলেন। তবে তাঁদের মধ্যে একজন ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর হলেন মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, আজই তিনি রেজিস্ট্রার বরাবর সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করার পত্র পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবেও পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রতিবাদে এবং এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ওপর যদি এ ধরনের আর কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে তাঁকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব না দেওয়া হয়, সেটাও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন আরেক সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রশাসনিক নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।

এ ছাড়া গতকাল বুধবার সহকারী প্রক্টর মো. নাজমুল হক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। অবশ্য তাঁর পদত্যাগপত্রটির তারিখ লেখা আছে ২৩ সেপ্টেম্বর। তবে সেটি গৃহীত হয়েছে গতকাল।

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত আছে। আজ কালো কাপড় পরে মিছিল করার কথা আছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত বর্তমান উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ বা বিদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পরিস্থিতিতে ঘটনা তদন্তে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দল। তদন্ত দলের সদস্যরা এখন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের বক্তব্য নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জোর আন্দোলন গড়ে তোলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪টি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে প্রকাশ করে। ওই আদেশের ৪ নম্বরে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক্‌স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা হবে না। যে ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে এত কিছু, সে বিষয়ে আদেশের ১২ নম্বরে বলা হয়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না। তবে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত আছে।