বয়স্ক ভাতায় অনিয়ম: শাস্তি না দিয়ে মৃত দেখানো হলো

সখীপুরে বয়স্ক ভাতা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতা নেওয়া সাতজনকে শাস্তি না দিয়ে তাঁদের মৃত ঘোষণা দিয়েছে সমাজসেবা কার্যালয়। এভাবে জীবিত ব্যক্তিদের মৃত ঘোষণা ও ভাতা বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ এনে ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাকদহ গ্রামবাসী এ অভিযোগ দেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্বাহী হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) মো. আল মামুনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাকদহ গ্রামের পরেশ চন্দ্র (৪৭), কমল সরকার (৪৯), যতীন্দ্র মোহন (৫০), খুশী মোহন (৫৪), পূর্ণচন্দ্র সরকার (৫৫), খুশী মোহন সরকার (৫৭), আরজু মিয়া (৫৭)—এই সাত ব্যক্তি তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রে কম বয়স হলেও বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে বছরের পর বছর ভাতা তুলে নেন। অথচ নিয়ম হচ্ছে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬৫ ও নারীদের ৬২ বছর হলে তাঁরা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হবেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘কম বয়সী ধনীরা পেলেও বৃদ্ধ গরিবেরা পান না’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়।

ওই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর সাতজনের ভাতা বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা এই সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁদের মৃত দেখিয়ে কার্ডের বিপরীতে নতুন সাতজনকে প্রতিস্থাপন করেন। এ ঘটনার দেড় বছর পর ৫ সেপ্টেম্বর জীবিত ব্যক্তিদের মৃত বানিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনে চাকদহ গ্রামবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

গ্রামবাসীর পক্ষে অভিযোগকারী আজিবর সিকদার বলেন, হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাশেম মিয়া একটানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি টাকার বিনিময়ে বয়স জালিয়াতি করে অপেক্ষাকৃত ধনী এবং জীবিত ব্যক্তিদের মৃত বানিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য হাশেম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমার কাছে ভাতার জন্য আসার পর আমি কার্ড করে দিয়েছি। কেউ বয়স জালিয়াতি করলে এর দায় আমার নয়। জীবিতদের মৃত বানানো—এটা সমাজসেবা কার্যালয় করেছে।’

বয়স জাল করে ভাতা গ্রহণকারী আরজু মিয়া, পূর্ণ চন্দ্র সরকার, খুশি মোহন দাবি করেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁদের বয়স কম লেখা ছিল। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা ভাতা পাওয়ার যোগ্য। দেড় বছর ধরে তাঁদের ভাতা বন্ধ। এখন শুনছেন, তাঁরা নাকি মারা গেছেন। তাঁদের মৃত বানিয়ে অন্যরা ভাতা তুলে খাচ্ছেন। তাঁরা এর বিচার চান।

এসব বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ওই সাত ব্যক্তি ২০১৪ সাল থেকে বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতা উত্তোলন করেছেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম আলোতে সংবাদ ছাপা হওয়ার পর তদন্ত করে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাঁদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মানবিক কারণে ওই সময় সাতজনকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ঝামেলা এড়াতে তাঁদের সাতটি কার্ডের বিপরীতে কার্ড প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে তাঁদের মৃত লেখা হয়েছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই সাতজনের টাকা ফেরত চেয়ে মামলা করা হবে।

তদন্ত কর্মকর্তা নির্বাহী হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) মো. আল মামুন গতকাল বুধবার জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে।