দুদকের অভিযানে ৫৪ মেট্রিক টন চাল জব্দ

দুদক
দুদক

রাজশাহীতে একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৫৪ মেট্রিক টন চাল জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চালগুলো সরকারি খাদ্যগুদামের বস্তায় ভরা। মুখ ওভাবেই সেলাই করা আছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয় এই অভিযান চালায়।

তবে ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এগুলো সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশনের চাল। বিষয়টি এখন অনুসন্ধান করবে দুদক। আপাতত চাল জব্দ করা অবস্থায় ওই প্রতিষ্ঠানেই রাখা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরের সপুরা এলাকায় ‘চৌধুরী ফুড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুদামে এই অভিযান চালায় দুদক। প্রতিষ্ঠানটিতে যন্ত্রের সাহায্যে চাল ছাঁটাই ও বাছাই করা হয়। তারা চালের ভেতর থেকে মরা চাল, ভাঙা চাল, কাঁকর ও পোকা বাছাই করে। এভাবে নিম্নমানের চালকে পরিষ্কার ও চকচকে করা হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ওই কর্মকর্তা জানান, জব্দ করা চালের বস্তার সংখ্যা ১ হাজার ৩৬০টি। এসব বস্তার কোনোটিতে ৩০ এবং কোনোটিতে ৫০ কেজি চাল রয়েছে। মোট চালের পরিমাণ ৫৩ হাজার ৮৪০ কেজি। চালের প্রতিটি বস্তাতেই রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের লোগো। এসব বস্তার গায়ে লেখা রয়েছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ, খাদ্য অধিদপ্তর।’ এর নিচে চালের বস্তার ওজন লেখা রয়েছে ৩০ কেজি। কিছু বস্তার গায়ে লেখা রয়েছে ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য, উৎপাদন মাস জানুয়ারি ২০১৭। নিট ওজন ৫০ কেজি। এম.এম. জুট।’

মো. আল-আমিন জানান, এই গুদামে সরকারি চাল থাকার বিষয়টি দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই তাঁরা অভিযান চালান। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

এই চালের তিনজন দাবিদার পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে একজনের নাম আবুল হোসেন। জব্দ করা চালের মধ্যে তাঁর ৫০ কেজি ওজনের ৬৫৮ বস্তা ও ৩০ কেজি ওজনের ৩০০ বস্তা চাল রয়েছে বলে তাঁর দাবি। আরেকজন দাবিদার হুমায়ূন কবীর। তাঁর রয়েছে ৩০ কেজি ওজনের ৯৭ বস্তা। আর ৩০ কেজি ওজনের ৩০১ বস্তা চাল রয়েছে ব্যবসায়ী কাওসারের।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকের নাম ইবরাহিম শাহ চৌধুরী। তিনি দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন, চাল সরকারি হলেও তিনি কিনে নিয়েছেন। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা রেশন হিসেবে পাওয়া চাল তাঁর কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি এ–সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র দুদক কর্মকর্তাদের সরবরাহ করেন।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বলছেন, চালগুলো ইনভেনটরি করা হয়েছে। অর্থাৎ জব্দ করে ইবরাহিমের গুদামেই রাখা হয়েছে। তাঁরা ইবরাহিমের দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করছেন। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) রিয়াজুর রহমান এখন রাজশাহীর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, এগুলো সরকারি সংস্থার রেশনের চালও হতে পারে। এই চাল যারা পায় তারা লট ধরেই বিক্রি দেয়, এমন ঘটনাও ঘটে। আবার তাদের সরকারি গুদামের বস্তাও বাজারে চলে যায়। গুদাম থেকে বের হওয়ার পরেই আর ওই বস্তার কোনো দায় তাঁদের থাকে না। এখন যে চাল জব্দ করা হয়েছে, দুদক তা তদন্ত করে দেখুক। এগুলো সত্যি সরকারি কোনো সংস্থার কি না। গুদাম থেকে সরকারি চাল ছেড়ে দেওয়ার সময় ‘ডেলিভারি সিল’ মেরে দিলেই তো বস্তা নিয়ে এই বিভ্রাট সৃষ্টির সুযোগ থাকে না। এটা কেন করেন না, জানতে চাইলে ডিসি ফুড বলেন, অনেক বস্তা একসঙ্গে দিতে হয়। তখন এটা করা যায় না।
তবে এ পর্যন্ত সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে দরিদ্রবান্ধব প্রকল্পের কোনো চাল খোয়া গেছে বলে রিয়াজুর রহমানের কাছে অভিযোগ নেই।