মেগা দুর্নীতি রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ছাড়া হয় না: বদিউল আলম মজুমদার

‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা। ধানমন্ডি, ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা। ধানমন্ডি, ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মেগা দুর্নীতি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া হয় না বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, মেগা দুর্নীতির ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনে চেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আজ বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সভায় বদিউল আলম এসব কথা বলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সর্বজনীন তথ্য অধিকার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সভাটির আয়োজন করে টিআইবি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গত এক দশকেও তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে অধিকাংশ জনগণ জানে না, এটি নাগরিক সমাজের অসফলতা। এই আইন বাস্তবায়ন নির্ভর করবে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর। ব্যাপক আকারে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে আবেদন হলে এবং তথ্য আইনকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন।

সভায় দুর্নীতি ও তথ্য অধিকার আইনের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক আফসান চৌধুরী। গবেষণায় বলা হয়, তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ জানে না। ২৫ শতাংশ মানুষ এ সম্পর্কে জানলেও তাদের মধ্যে ২০ শতাংশের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। মূলত, ৫ শতাংশ মানুষের তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে ধারণা রয়েছে।

আফসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে যেতে চায় না। তারা মনে করে, পুলিশের কাছে গেলে ঝামেলা আরও বাড়বে। এ কারণে তারা আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। অধিকাংশ মানুষ মনে করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। কারণ, যাদের কাছে অভিযোগ দাখিল করবে, তারা নিজেরাই দুর্নীতিবাজ। এ জন্য মানুষ এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে তথ্য পাওয়ার জন্য তথ্য অধিকার আইনে ৯৯ হাজার ২৩৮টি আবেদন জমা হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর ১১ হাজারের বেশি আবেদন এসেছে, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য। বিশ্বের ১২৪টি দেশে তথ্য অধিকারবিষয়ক আইন আছে। গ্লোবাল রাইট টু ইনফরমেশন রেটিং অনুযায়ী, ১২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আইনটি মানের দিক থেকে ২৬তম অবস্থানে রয়েছে।

টিআইবি বলছে, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও বাংলাদেশে এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ আইনের ৭ নম্বর ধারায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি—এসব যুক্তিতে বৃহৎ ব্যতিক্রম তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে এর পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা না থাকায় অপব্যবহারের সুযোগ থাকে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্য অনেক দেশের তথ্য অধিকার আইনের থেকে বাংলাদেশের আইনটি ভালো। কিন্তু আইন ভালো থাকাই যথেষ্ট নয়; বাস্তবায়ন জরুরি। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পেতে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সামাজিক আন্দোলনের বড় উপাদান হতে পারে তথ্য অধিকার আইন।

বিশ্বব্যাপী তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জনকারী দেশগুলোর অভিজ্ঞতা এবং তথ্য অধিকার বিষয়ে টিআইবির স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে সভায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ব্যবসা, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করা, আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, তথ্য ফরম পূরণের আবশ্যকতা হিসেবে তথ্য কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করার বিষয়টি অপসারণ, সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় তথ্য অধিকার আইনে অনুরোধকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা বাদ দিয়ে অনুরোধকারী ব্যক্তির দেওয়া নির্দিষ্ট যেকোনো ঠিকানায় তথ্য প্রদানের সুযোগ রাখা, তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮–এর ৩২ ধারাসহ বাক্‌স্বাধীনতার পরিপন্থী অন্যান্য ধারা বাতিল, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা ডেস্ক তৈরি ও অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা অন্যতম।