পাহাড়ের রিসোর্টেও জি কে শামীম

জি কে শামীম। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জি কে শামীম। প্রথম আলো ফাইল ছবি

অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বান্দরবানে নির্মাণাধীন একটি রিসোর্টের সঙ্গে। বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে সাইঙ্গ্যাপাড়ায় ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোম্পানি লিমিটেড’ নামের প্রস্তাবিত এই রিসোর্টের চেয়ারম্যান তিনি। প্রাথমিকভাবে শামীম ওই রিসোর্টে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছেন।

প্রস্তাবিত ওই রিসোর্টের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের জমি দখল, মামলা দিয়ে হয়রানি ও ঝিরি-ঝরনা দখলের অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে রিসোর্টসংলগ্ন সাইঙ্গ্যাপাড়া ও লাইমিপাড়ার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশাসন তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে।

রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, সাইঙ্গ্যাপাড়ায় পাঁচ তারকা হোটেল, বিনোদন ও খাদ্য পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির নয়জন অংশীদারের (শেয়ারহোল্ডার) মধ্যে এ মাসের বোর্ড সভায় জি কে শামীমকে চেয়ারম্যান ও তাঁকে এমডি করা হয়েছে। কোম্পানির শুরুতে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে জি কে শামীম ২ কোটি টাকার বিনিয়োগে অংশীদার রয়েছেন।

এমডি জসীম উদ্দিন জানান, কোম্পানি গঠনের শুরুতে জি কে শামীম ছিলেন না। প্রকল্প ভালো মনে হওয়ায় তিনি যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকেও নেওয়া হয়েছে।

জেলার সাইঙ্গ্যা ত্রিপুরাপাড়া ও লাইমি বমপাড়ার বাসিন্দারা জানান, জি কে শামীমের ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোম্পানি’ পুলিশ সুপারের নামে ১৮ শতক জমি দান করে সেখানে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। ফাঁড়ি হওয়ায় বাসিন্দারা পুলিশি হয়রানির শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন।

তবে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, জনস্বার্থে যথাযথ নিয়মবিধি মেনে দানকৃত জমি নেওয়া হয়েছে। মিলনছড়ি পুলিশ ক্যাম্প সেখানে স্থানান্তর করা হবে। পুলিশ এ পর্যন্ত কোম্পানির স্বার্থে কোনো কাজ করেনি এবং করবেও না।

জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাইঙ্গ্যাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকায় পাহাড়, ঝিরি ও ঝরনা ঘিরে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট। এই রিসোর্টের ভেতরে একটি পুকুরের মালিকানা দাবি করেছেন সাইঙ্গ্যা ত্রিপুরাপাড়ার জোসেফ সূর্য ত্রিপুরা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, পুকুরসহ পূর্ব পাশের জমি তাঁর। কোম্পানি প্রথমে পুকুরসহ জমি কিনতে চেয়েছিল। তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি। এখন তাঁর পুকুর ও জমি কোম্পানি নিজেদের বলে দাবি করছে। পাশাপাশি কোম্পানির লোকজন পাড়ার কার্বারিসহ (পাড়াপ্রধান) চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

>

বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সাইঙ্গ্যাপাড়ায় প্রস্তাবিত রিসোর্টের চেয়ারম্যান জি কে শামীম।

লাইমিপাড়া ও সাইঙ্গ্যা ত্রিপুরাপাড়ার কার্বারি, ইউপি সদস্যসহ ৬২ জন গত ৯ জুন এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের কাছে। এতে বলা হয়েছে, সিলভান স্পা কোম্পানি বিভিন্ন কৌশলে সাইঙ্গ্যা–মারমাপাড়ার জমি কিনে ও দখল করার কারণে পাড়াটি উচ্ছেদ হয়েছে। ৫০ একর জমি কিনে ১০০ একরের বেশি জমি দখল করা হয়েছে। কোম্পানির লোকজন একটি রাবারবাগানের ২৭৫টি রাবারগাছ ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে রিসোর্টের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরি–ঝরনাসহ পানির উৎস বন্ধ করে দিলে সাইঙ্গ্যা ত্রিপুরাপাড়া, হাতিভাঙ্গাপাড়া ও লাইমিপাড়ার প্রায় ২৫০টি পরিবার পানির সংকটে উচ্ছেদ হতে বাধ্য হবে।

তবে স্থানীয় পাহাড়িদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিসোর্টের জন্য কারও জমি দখল করা হয়নি। সাইঙ্গ্যা মারমাপাড়ার পরিবারগুলো স্বেচ্ছায় কোম্পানির কাছে জমি বিক্রি করে চলে গেছেন। বরং ত্রিপুরারাই তাঁদের চৌহদ্দিভুক্ত জমি ও পুকুর দখল করেছেন। এ জন্য তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পানির উৎস ও বমদের জমিতে কোনো কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম বলেন, রিসোর্ট কোম্পানির জমি নিয়ে আগে থেকে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।

বান্দরবান সদর উপজেলার ইউএনও নোমান হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের আগে কিছু বলা যাবে না।