মর্জিনার মায়ের হোটেল টু সনাতনের লাল চা

আসামবস্তি সড়কের মোরঘোনায় সনাতনের চায়ের দোকানের লাল চা।  প্রথম আলো
আসামবস্তি সড়কের মোরঘোনায় সনাতনের চায়ের দোকানের লাল চা। প্রথম আলো

মর্জিনার মা কথায় বেশ চটপটে। কথার জাদুতে ভুলিয়ে রাখেন—‘বইনের এডে ভাত হাইতে আইস্যু ভালা হতা। বইনোর লাই উগ্যা পান আনিত ন ফারঅ। আইচ্ছে বইয়্যু বইয়্যু আগে ভাত হ।’ (বোনের কাছে ভাত খেতে এসেছ, আমার জন্য একটা পানও আনতে ইচ্ছা করেনি? আচ্ছা আগে বসে ভাত খাও)’। এভাবে দোকানে আসা লোকজনকে স্বাগত জানান তিনি। অচেনা মানুষটিও যেন কত আপন।

 মর্জিনার মায়ের নাম আয়েশা বেগম। রাঙামাটির কাপ্তাই বড়ইছড়ি এলাকায় ভাতের হোটেল চালান তিনি। নাম ‘মর্জিনার মায়ের হোটেল’। ছোট্ট বেড়ার ঝুপড়ির মতো এই দোকানে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ভাত খাওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লেগে যায়। মর্জিনার মা নিজেই বাজার করেন নিজেই রান্না করে নিজেই পরিবেশন করেন। ধোয়ামোছার জন্য আরেক নারী কাজ করেন এখানে।

কাপ্তাই আসা পর্যটকদের কাছে এই হোটেলটি বেশ পরিচিত। ৯ সেপ্টেম্বর বড়ইছড়ির এই দোকানে দুপুরে খেয়ে সামনের দিকে এগোতে একের পর এক বেসরকারি পর্যটন স্পট চোখে পড়ে। কর্ণফুলী নদীর ধারে সবুজ পাহাড়ের পাশে গড়ে উঠেছে এসব কেন্দ্র। জুম প্যানোরোমা এবং প্রশান্তি পর্যটনকেন্দ্র দুটি বেশ বড়।

প্যানোরমা পর্যটনকেন্দ্রটি নদীর ধারে। এখানে কায়াক বোটে চড়তে চড়তে দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বোটে চড়তে খরচ পড়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে কটেজ। রাতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। পিকনিক স্পট হিসেবেও ভাড়া দেওয়া হয়।

প্যানোরোমার পর প্রশান্তি পর্যটনকেন্দ্র। কাপ্তাই সদরের কাছাকাছি এই কেন্দ্রটি। এখানে বসে কর্ণফুলী নদীতে জেলেদের মাছ ধরা কিংবা যাত্রী পারাপারের দৃশ্য দেখা যাবে। এ ছাড়া কায়াক বোটে চড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানেও কটেজ রয়েছে।

>

কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই লেকের ধারে সবুজ পাহাড়ের পাশে গড়ে উঠেছে নানা পর্যটনকেন্দ্র।

বড়ইছড়ি থেকে কাপ্তাই প্রায় সাত কিলোমিটার। কাপ্তাই সদর থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে গেলে নৌবাহিনীর একটি পিকনিক স্পট রয়েছে। কায়াক ক্লাব নামের স্পটে রয়েছে কায়াক, ট্রাই সাইকেল, বারবিকিউ বোট ও ডলফিন বোট।

কাপ্তাই থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা নিজস্ব গাড়িতে করে চলে যাওয়া যায় রাঙামাটি। সড়কটির নাম কাপ্তাই আসামবস্তি সড়ক। হ্রদের পাশ দিয়ে পাহাড়ি পথে চলে গেছে সড়কটি। চলতে চলতে চোখে পড়বে পাহাড়, হ্রদ আর সবুজের মনোরম দৃশ্য। কিছুদূর পরপর হ্রদের ওপর রয়েছে সেতু। সেতুতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত পর্যটকেরা।

প্রায় ১২ কিলোমিটার গেলে বড়াদাম এলাকায় বেড়াইন্যা লেক শোর ক্যাফে নামে একটি পর্যটনকেন্দ্র। একেবারে হ্রদ ঘেঁষে তৈরি করা এই পর্যটনকেন্দ্রটি মন টানে। হ্রদের পাশে বসে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি কায়াক বোটে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

বেড়াইন্যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিল্লোল চাকমা বলেন, শীত–গ্রীষ্ম এবং বর্ষা প্রতি মৌসুমে পর্যটক আসেন। তবে শীতে একটু বেশি হয়। বিশেষ করে পিকনিক করতে আসেন তখন লোকজন।

একই এলাকায় ইজোড় নামে আরও একটি নতুন পর্যটনকেন্দ্র করা হয়েছে। এটিতেও রয়েছে খাওয়াদাওয়া এবং বেড়ানোর নানা ব্যবস্থা। তাহমিদ নামে এক তরুণ বলেন, ‘এখানকার এই রেস্তোরাঁগুলোতে বসলে মন ভালো হয়ে যায়। অনেক সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তাই বন্ধুরা মিলে ছুটে এলাম।’

বড়াদাম এলাকায় আরেকটি বড়গাং নামে আরেকটি রেস্তোরাঁয়ও পর্যটকদের ভিড় লেগে রয়েছে। বড়াদাম থেকে আর কিছুদূর গেলে রাঙামাটি সদর ইউনিয়নের মোরঘোনা এলাকা। সড়কের পাশে নারী-পুরুষকে বসে আড্ডার পাশাপাশি হ্রদ দর্শনে ব্যস্ত। আর আড্ডায় অবশ্যই রয়েছে চা।

পাহাড়ি বাঙালি কিংবা পর্যটক সবাই ভিড় করার আরেকটি কারণ পাশের একটি ঝুপড়ি দোকানের রং চা। সনাতন চাকমার দোকানের পাঁচ টাকা দামের রং চা জনপ্রিয় বেশ। কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্যের সঙ্গে চা-টা দারুণ মানায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।