সৈকতে নিরাপদ গোসল মাত্র দুই কিলোমিটারে

সামনে পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময়ে অন্তত ৩০ লাখ পর্যটক পর্যটন শহর কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন। প্রায় সব পর্যটকই সৈকতের গোসলে নেমে সাগরে গা ভাসান। অথচ ১২০ কিলোমিটার সৈকতে মাত্র দুই কিলোমিটারে নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা আছে। বাকি ১১৮ কিলোমিটারের অরক্ষিত (অনিরাপদ)। সৈকত গোসলে নেমে প্রাণহানি হচ্ছে পর্যটকের।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা গেছে, কয়েক হাজার পর্যটক সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। কেউ কেউ টায়ার-টিউবে গা ভাসিয়ে এগোতে চাচ্ছেন সামনের দিকে। জোয়ারের বড় বড় ঢেউগুলো মানুষকে আন্দোলিত করলেও মুহূর্তে ভাসিয়ে নেওয়ার ভয়ও আছে অনেকের। কিছুক্ষণ পরপর বাঁশি বাজিয়ে লাইফগার্ড কর্মীরা সতর্ক করছেন পর্যটকদের।

ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান (৪৫) বলেন, সকাল থেকে কয়েকজন লাইফগার্ড কর্মী ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেসে যাওয়ার সময় ১২ জনকে টেনে উদ্ধার করেছেন।

লাবনী পয়েন্টের দুইপাশের (উত্তর ও দক্ষিণে) চার কিলোমিটার সৈকতে গোসল করছেন আরও কয়েক হাজার পর্যটক। যদিও এই সৈকতে গোসলে নামার নিয়ম নেই।

সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট টেকনাফ সৈকতে ফুটবল আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদ্রাসাছাত্র মোহাম্মদ আলী (১৫)। চার ঘণ্টা পর তার মৃতদেহ ভেসে আসে। ১০ আগস্ট কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিক আহমদ। পরে দুজনের মৃতদেহ ভেসে আসে।

সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় আছে ‘সি সেইফ’ নামে বেসরকারি একটি লাইফগার্ড বাহিনী। বাহিনীর ২৫ জন লাইফগার্ড কর্মী সৈকতের লাবনী, কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটারে উদ্ধার তৎপরতা চালান। গত চার বছরে তাঁরা ১২৭টি উদ্ধার তৎপরতার ঘটনায় ২২২ জন পর্যটককে প্রাণে রক্ষা করেছেন।

সি সেইফ–এর ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ১২০ কিলোমিটার সৈকতের ১১৮ কিলোমিটারে নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, ইনানী ও হিমছড়ি সৈকতও আছে। অথচ প্রতিদিন এসব সৈকতে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার পর্যটক গোসলে নামছেন।

পুলিশ ও লাইফগার্ড বাহিনীর তথ্যমতে, গত ১২ বছরে সৈকতে গোসলে নেমে অন্তত ৯৮ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।

অরক্ষিত সৈকত প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। এ জন্য মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। সেখানে নিরাপদ গোসলের পাশাপাশি বিনোদনের পৃথক ব্যবস্থাও থাকবে।