অস্ত্র ও মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা খালেদ এবার ১০ দিনের রিমান্ডে

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ফাইল ছবি

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই আদেশ দেন।

এর আগে আজ শুক্রবার বিকেলে খালেদকে গুলশান থানার অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতে হাজির করে পুনরায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে র‍্যাব। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তিনি ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব, আরামবাগ ক্লাবসহ ফকিরাপুলের অনেকগুলো ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। এসব অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এসব ক্লাবে দিনরাত জুয়া খেলা হতে যার নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত খালেদের হাতেই। এ ছাড়া খালেদ খিলগাঁও শাজাহানপুর চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কোরবানি ঈদের সময় শাজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া, কমলাপুর, সবুজবাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ফকিরাপুল সহ বেশির ভাগ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ মাহমুদ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করার জন্য গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। স্বরাষ্ট্র এবং মাদক উদ্ধারের জন্য আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

তবে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। আর যা জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার তা ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার কাছে বৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে, শুধুমাত্র ওই অস্ত্র নবায়ন করা হয়নি। যদি আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার হয় তাহলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।

খালেদ মাহমুদের পক্ষে তাঁর আইনজীবী মাহমুদুল হক আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল যুবলীগের নেতা। যে ক্যাসিনোর কথা বলা হচ্ছে তা সারা বিশ্বে চলছে। খালেদকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ নেই। খালেদ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি ঠিকাদারির কাজ করছেন।

আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে অস্ত্র ও মাদক মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনের কাছে আদালত জানতে চান, কেন এই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। জবাবে র‍্যাবের বেলায়েত হোসেন আদালতকে বলেন, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছেন। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এর জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মাদক, অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার হন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ। এ ঘটনায় র‍্যাব বাদী হয়ে খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে মামলা করে। পরদিন খালেদ আদালতে হাজির করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় সাত দিন করে ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেদিন শুনানি নিয়ে অস্ত্র ও মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, ডিবি থেকে মামলা দুটির তদন্তভার পেয়েছে র‍্যাব।

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিকেলে যুবলীগের খালেদকে আদালতে হাজির করা হয়। হাতকড়া পরিয়ে খালেদকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। খালেদ আদালতে কোনো কথা বলেননি।

পুলিশ সূত্র জানায়, কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে খালেদের অফিস থেকে মাদক পাওয়ার ঘটনায় মতিঝিল থানায় তাঁর নামে আরেকটি মামলা রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আজাদ রহমান। আসামিপক্ষে ছিলেন তানভীর হাসান।