উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কমিশনও বাড়ছে: আনু মুহাম্মদ

শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় আনু মুহাম্মদসহ অতিথিদের একাংশ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় আনু মুহাম্মদসহ অতিথিদের একাংশ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

চলমান দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দেশে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কমিশনেরও উন্নয়ন ঘটছে। আগে এক লাখ টাকা হলে এখন তা এক কোটি হয়েছে। কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই কথা বলেন। নাগরিক ছাত্র ঐক্য ‘শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, এ সরকারের সংখ্যা প্রীতি অনেক। কিন্তু মানের দিকে মাথাব্যথা নেই। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সব উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয় যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় নেই। শিক্ষকতার চেয়ে যারা আনুগত্যের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকবেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ছাত্রলীগকে খুশি করতে না পারলে আরেক মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে থাকা সম্ভব না। ছাত্রলীগের নেতাদের খুশি করা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থায় বরাদ্দ যত বেশি ঝুঁকি তত বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বরাদ্দে স্থাপত্য নিয়োগ, ঠিকাদার নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সত্য কথা না বলাটাই হলো সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। আমরা সবাই তার অংশীদার হয়ে যাচ্ছি। সাহস হারিয়ে ফেলেছি। সত্য বলতে না দেওয়াও দুর্নীতি।’

ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানে হলেও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে সবাইকে কথা বলতে হবে। সোচ্চার হতে হবে। আগে কখনো ছাত্রদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি। এখন সরকারিভাবে স্বার্থের জন্য এসব করা হচ্ছে।

চরম একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র জনগণের ওপর চেপে বসেছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিআর আবরার। তিনি বলেন, এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজমান। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে। কোনো জবাবদিহি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নয় ভোটার নিয়োগ হয়। শিক্ষক নিয়োগে অনেক অধঃপতন হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, গুটি কয়েক শিক্ষকের কারণে পুরো শিক্ষক সমাজ কলুষিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সোচ্চার হতে হবে।

হাসান আল মামুন বলেন, শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি বা সন্ত্রাস একটি চক্র। সরকার নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কিছু লোক নিয়োগ দিয়েছে যারা ক্ষমতাসীন ছাত্রদের অন্যায়কে মদদ দিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কোনো নজর নেই।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা অভিযোগ করেন, দেশে এমন কোনো প্রকল্প নেই যেখান থেকে দুর্নীতি হয় না। উন্নয়ন এখন ৫ শতাংশ আর দুর্নীতি হয় ৯৫ শতাংশ।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, নাগরিক ঐক্যের জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।