বাংলাদেশের ঘরের শত্রু বেশি বিভীষণ: ইফতেখারুজ্জামান

ইফতেখারুজ্জামান
ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য খুবই কম দায়ী। বাংলাদেশ বৈশ্বিক শত্রুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের ঘরের শত্রু আরও বেশি বিভীষণ। ঘরের শত্রু বাংলাদেশকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বৈশ্বিক হাব হিসেবে রূপান্তর করছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে টিআইবি। ‘একটাই পৃথিবী, একটাই বাংলাদেশ। বাঁচাও পৃথিবী, বাঁচাও বাংলাদেশ, বাঁচাও প্রজন্ম’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সারা বিশ্ব যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছে, সেখানে জাতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ভর হয়ে যাচ্ছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভারত ও চীন নিজেদের দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে এসেছে। অথচ, আগ্রাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিতে বাধ্য করছে।
টিআইবি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৭ম স্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্ব চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের ভুল শিকার করুক। প্যারিস চুক্তির আওতায় যে অঙ্গীকার দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ক্ষতিপূরণের অর্থ অবিলম্বে ছাড় করতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে তার মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সৌর, জল ও বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য খাত থেকে জ্বালানি উৎপাদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে এখনো সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এই প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার ঘোষণা দিক। ২০৩০ সালের মধ্যে সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বন্ধ এবং সেগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করুক। তিনি আশা প্রকাশ করেন সরকার অতি শিগগির নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে অগ্রসর হবে।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় চলমান প্রকল্পে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। জলবায়ু প্রকল্পের একটি টাকাও যেন দুর্নীতির মাধ্যমে অন্যভাবে ব্যয়িত না হয়।

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক জরুরি সম্মেলনকে সামনে রেখে এ বছর ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ১২০টি দেশে শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট, গণপ্রতিবাদ ও র‍্যালির আয়োজন করে। যা ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট’ বা ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার প্রতিবাদে সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ ২০১৮ সালে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। পরে গ্রেটার অনুপ্রেরণায় এ বছর দেশে দেশে স্কুল শিক্ষার্থীরা একই ধরনের বিক্ষোভে শামিল হয়। গ্রেটার ঝুলিতে এবার বিকল্প নোবেল এসেছে । গ্রেটা এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছে ।