হাসপাতালে তাঁর পাশে কেউ নেই

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয় একব্যক্তি। ২৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয় একব্যক্তি। ২৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে গত মঙ্গলবার অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় রেখে যায় ফতুল্লা থানা-পুলিশ। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেদিনই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন আবাসিক চিকিৎসক। তারপর পেরিয়ে গেল চার দিন। এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন পরিচয়হীন ওই রোগী।

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ খোরশেদ আলম বলেন, রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ফতুল্লা থানা-পুলিশকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ২ নম্বর পর্যবেক্ষণ কক্ষের একটি শয্যায় পড়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিটি। আধবোজা চোখে ময়লা জমে আছে। মুখে কাঁচাপাকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ঠোঁটের মধ্যে শক্ত হয়ে লেগে থাকা খাবারে মাছি বসে আছে। বুকের ওপর ভাঁজ করে রাখা বাঁ হাত। স্যালাইন লাগানো ডান হাতটি গজ দিয়ে শয্যার সঙ্গে বাঁধা। খলি গা। সারা শরীরেই ছোপ ছোপ ময়লা। পাঁজরের ওপরে আঘাতের চিহ্ন। স্যাঁতসেঁতে বালিশের পাশে একটি পাউরুটির প্যাকেট রাখা।

রোগীর মাথায় স্পর্শ করতেই অস্পষ্ট দৃষ্টি নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকান। নাম–ঠিকানা জানতে চাইলে চোখমুখে যন্ত্রণা নিয়ে শব্দহীন কিছু বলার চেষ্টা করেন। ‘আপনাকে কেউ মেরেছে?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়েন তিনি। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। বারবার ঠোঁট নেড়ে কিছু বলার চেষ্টা করেন।

পাশে থাকা জরুরি বিভাগের ইনচার্জ খোরশেদ আলম বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে তাঁকে কেউ মারধর করেছে। প্রথম দুদিন অচেতন অবস্থায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার চোখ মেলে তাকানোর পর কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাঁর মুখে কোনো শব্দ নেই।’

তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁর (অজানা রোগীর) চিকিৎসা করছেন। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে আরও উন্নত চিকিৎসা করানো যেত।

শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এ বিষয়ে জানতে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিকেলে ফের যোগাযোগ করা হলে আসলাম হোসেন বলেন, ফতুল্লা থানার ওসি (তদন্ত) হাসানুজ্জামান গিয়ে রোগীর উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাসপাতালের সমাজসেবা কেন্দ্রের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ওসি আসলাম হোসেন বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু জাহের বলেন, ‘এমন কোনো রোগীর বিষয়ে জানা নেই।’ এই প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসার আওতার বাইরে হওয়ায় আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেছেন। পুলিশ না নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। শনিবার সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানাব।’

হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা নাহিন সুলতানা বলেন, ‘শুক্রবার দিন মুঠোফোনে বক্তব্য দিতে পারব না। বক্তব্যের প্রয়োজন হলে অফিসে আসেন।’