ভবন নদীতে, গাছতলায় ক্লাস

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নওয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। গত মঙ্গলবার তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নওয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। গত মঙ্গলবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

২০০৮ সালে বিদ্যালয় ভবন মধুমতী নদীগর্ভে বিলীন হয়। সেই থেকে কখনো ছাপরায়, কখনো অন্যের বাড়িতে ক্লাস হয়েছে। তিন বছর ধরে পাঠদান চলছে গাছতলায়। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। 

এ অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের নওয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে বিদ্যালয় ভবন মধুমতী নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর নদীর কূলে একটি ছাপরা তুলে বিদ্যালয় চালানো হতো। ২০১৩ সালে সেটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতির বাড়ির একটি ঘরে ও উঠানে চলেছে পাঠদান। ২০১৬ সালে গ্রামের রাস্তার পাশে তোলা হয় ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সে ঘরে দুটি ক্লাস নেওয়া যায়। অন্য দুটি ক্লাস হয় গাছতলায় ও বারান্দায়।   

সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট্ট ওই টিনের ঘরে ছোট ছোট তিনটি কক্ষ। মাঝের কক্ষে কার্যালয়। অন্য দুটি কক্ষে হয় ক্লাস। ঘরের প্রতিটি কক্ষে একটি করে জানালা। তাই আলো-বাতাস কম ঢোকে। ওপরে সিলিং নেই। নিচু ঘর। তাই গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘরের মেঝে মাটির।

এ ঘরের বারান্দায় একটি এবং গাছতলায় আরেকটি ক্লাস হয়। মাঝেমধ্যে গাছের পাতা ও ছোট ডাল পড়ছে শিক্ষার্থীদের গায়ে। গায়ে লাগছে রোদ। রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ধুলাবালু উড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের শরীরে। 

এ বিষয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিলকিস আক্তার, সাজেদা খানম ও খন্দকার মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বিদ্যালয়ে প্রথম শিফটে (পালায়) ১২টা পর্যন্ত প্রাক্‌-প্রাথমিক (শিশু), প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। দ্বিতীয় পালায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। সমাপনী পরীক্ষার জন্য পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস উভয় পালায় হয়। তাই প্রথম পালায় গাছতলায় ও বারান্দায় ক্লাস নিতে হয়। দ্বিতীয় পালায় একটি ক্লাস গাছতলায় বা বারান্দায় নিতে হয়। বৃষ্টি হলে গাছতলার শিক্ষার্থীরা দৌড়ে টিনের ঘরে ওঠে। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে না। শিশু শ্রেণির জন্য আলাদা সজ্জিত শ্রেণিকক্ষ রাখার নির্দেশনা থাকলেও কক্ষের অভাবে সেটি করা হয়নি। খোলা জায়গায় বসে শিক্ষার্থীরা টিফিন খায়। পরীক্ষার সময় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি হলে পরীক্ষাও নিতে সমস্যা হয়। গরমে শিশু শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খোলা পরিবেশে পাঠদানে ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণাও জন্ম নিচ্ছে। 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী এসমত আরা, জান্নাতি, আশা, রাবেয়া ও রমজান এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা, অধরা, মারিয়া ও সাজিদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলে, মাঝেমধ্যে ধুলাবালুতে চোখ-মুখ ভরে যায়, বাতাসে বই–খাতা উড়ে যায়। ভয়ে থাকি গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে কি না, আবার ঝড় ও বজ্রপাতের ভয় হয়। রাস্তা দিয়ে লোকজন ও গাড়ি যায়, সেদিকে সবাই তাকিয়ে থাকি। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জিল্লুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দ হওয়া বার্ষিক স্লিপের টাকায় ছয় শতাংশ জমি কিনে ওই ছোট ঘর তুলেছি। ভবন না হলে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ আসবে না। এতে এ এলাকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বর্মণ জানান, ভবন না থাকায় বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। ভবনের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ভবন হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।