৪০০০ টাকা আয়ের চিন্তায় বেপরোয়া বাস চালাচ্ছিলেন সেই চালক

দুর্ঘটনায় নিহত ফারহা নাজ। ছবি: ফারহা নাজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে
দুর্ঘটনায় নিহত ফারহা নাজ। ছবি: ফারহা নাজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে

আগে গিয়ে যাত্রী তোলার চিন্তায় বাস দ্রুত চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রাজধানীর মহাখালীতে ফারহা নাজকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা বাসের চালক। দুর্ঘটনার ২২ দিন পর গতকাল শুক্রবার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসের চালক শামীম ছৈয়ালকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর শামীম পুলিশকে বলেন, ‘আগে গিয়ে যাত্রী নিতে হবে, এই চিন্তা ছাড়া মাথায় আর কিছু ছিল না। শুধু চিন্তা ছিল আগে যেতে হবে, আগে যাত্রী ওঠাতে হবে এবং ৪০০০ টাকার ওপরে আয় করতে হবে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান আজ শনিবার প্রথম আলোকে এ কথা জানান। 

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শামীম ঢাকার কচুক্ষেতে থাকতেন। তিনি শরীয়তপুরের মোশারফ ছৈয়ালের ছেলে।

৫ সেপ্টেম্বর বাসচাপায় মারা যান ফারহা নাজ (২৮)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন ফারহা। চার বছর আগে বিয়ে হয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের সঙ্গে। রাজধানীর মিরপুরের মণিপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। ফারহা-নাজমুলের সংসারে রয়েছে দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাহরিন হাসান ইশরা।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার দিন সকাল নয়টার দিকে স্বামী নাজমুল হাসানের মোটরসাইকেলে চড়ে মহাখালী আসেন ফারহা নাজ। বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি-আমতলীর মাঝামাঝি মহাখালী উড়ালসড়কের পাশের রাস্তা পার হয়ে ফুটপাতে উঠছিলেন তিনি। ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে আসছিল ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো জ-১১-৩০০৩)। বাসটি প্রথমে ধাক্কা দেয় বিদ্যুতের একটি খুঁটিতে। সেখানে দাঁড়ানো এক যুবক ছিটকে পড়ে যান। কিন্তু বাসের গতির তীব্রতায় নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় পাননি ফারহা। ফুটপাত ঘেঁষে বাসটি মুহূর্তেই মুচড়ে দেয় আরেকটি সড়কবাতির খুঁটি। বাসের ধাক্কায় বেঁকে যায় খুঁটিটি। পাশে থাকা ফারহা নাজ পড়ে যান সড়কের ওপর। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

চাপা দেওয়া বাসের গ্রেপ্তার চালক শামীম ছৈয়াল। ছবি: ডিবির সৌজন্যে
চাপা দেওয়া বাসের গ্রেপ্তার চালক শামীম ছৈয়াল। ছবি: ডিবির সৌজন্যে

 ঘটনার পর পরই বাস ফেলে পালিয়ে যান চালক শামীম। এ ঘটনায় ফারহা নাজের স্বামী বনানী থানায় মামলা করেন।

উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, বাসচালক শামীম ছৈয়ালকে গতকাল মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চালককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাসটি চালানোর জন্য ঢাকা-ভৈরব রুটের অনুমোদন ছিল। কিন্তু বাসটির মালিক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিস ব্যানারের (মিরপুর ১৪ হইতে বনানী কাকলী রুট) পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে অনুমোদনবিহীন রুটে বাসটি চালাতেন। বাসটি সারা দিনে প্রায় চার হাজার টাকা আয় করলে চালক হিসেবে শামীম প্রতিদিন৭০০ এবং তাঁর সহকারী ৪০০ টাকা পেতেন। চার হাজার টাকার বেশি আয় হলে প্রতি হাজারে তাঁদের ১০০ টাকা করে বেশি দেওয়া হতো। তিনি বলেন, চালকের হালকা যান চালানোর লাইসেন্স ছিল, তবে বাসের মতো ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার চালক পুলিশকে জানান, বেশি যাত্রী নিলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে, সে কারণে ঘটনার দিন তিনি মহাখালীতে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের অন্য একটি বাস পেছনে দেখে তাড়াহুড়ো করে আগে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ওই বাস যেন তাঁর আগে না যেতে পারে সেই চিন্তায় দ্রুত বাস চালান। আগে গিয়ে যাত্রী নিতে হবে, এই চিন্তা ছাড়া মাথায় আর কিছু ছিল না। শুধু চিন্তা ছিল আগে যেতে হবে, আগে যাত্রী ওঠাতে হবে এবং ৪০০০ টাকার ওপরে আয় করতে হবে। ওই সময় উড়ালসড়ক থেকে নেমে আসা গাজীপুরগামী একটি বাস বাম পাশে সামান্য ফাঁকা রেখে যাত্রী নামানোর জন্য আস্তে আস্তে চলছিল। শামীম তাঁর বাস নিয়ে সেই বামের ফাঁকা জায়গা দিয়েই দ্রুত চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ফারহা নাজকে চাপা দিলে তাঁর মৃত্যু হয়।