প্রতিপক্ষের হামলায় গৃহবধূর মৃত সন্তান প্রসবের অভিযোগ

মাদারীপুর
মাদারীপুর

মাদারীপুরে প্রতিপক্ষের আঘাতের শিকার হয়ে জিতু আক্তার নামের এক সন্তানসম্ভবা গৃহবধূ মৃত সন্তান প্রসব করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, গতকাল শুক্রবার রাতে জিতুকে প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং মাটিতে ফেলে লাথি মারে। পরে আহত অবস্থায় জিতুকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর মৃত সন্তান প্রসব করান।

পুলিশ ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের উকিলবাড়ি এলাকায় জহিরুল হাওলাদারের সঙ্গে চাচাতো ভাই মিলন হাওলাদারের পারিবারিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গতকাল রাত ১০টার দিকে জহিরুল তাঁর সমর্থকদের নিয়ে অতর্কিতভাবে মিলনের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এতে মিলনের ছোট ভাই রাজুর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী জিতু আক্তার (২৫) গুরুতর আহত হন। এ সময় আরও চারজন আহত হন। তাঁরা হলেন সাফিয়া বেগম (৪৫), কালু হাওলাদার (২৪), নাদিম হাওলাদার (১৪) ও আবদুল হাই হাওলাদার (৬০)। তাঁদের সবাইকে রাতেই মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জিতু আক্তারের অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে পাশের প্রত্যাশা নামের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক এলিজা বেগম বলেন, জিতু আক্তারকে রাত ১১টার দিকে আহত অবস্থায় ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়। তাঁর তলপেট ও দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আল্ট্রাসনোগ্রামে গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া দেখতে না পাওয়ায় আজ শনিবার ভোররাতে তাঁর সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। ওই গৃহবধূ মৃত সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসক জানান, গৃহবধূর আরও এক সপ্তাহ পর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় ছিল। পেটে গুরুতর আঘাতে গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

জিতুর স্বামী রাজু হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জহিরুলের লোকজন আমার স্ত্রীকে প্রথমে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে মাটিতে ফেলে লাথি দিতে থাকে। ওরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। তাই আমাদের ঘরের সবাই ওদের হামলার শিকার হয়।’

রাজুর বড় ভাই মিলন হাওলাদার বলেন, ‘জহিরুল আমার চাচাতো ভাই। আমাদের সঙ্গে ওদের পূর্বশত্রুতা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে আমার বাড়ির লোকজন ও আশপাশের লোকজনের ওপর জহিরুল তার লোকজন নিয়ে হামলা করে। ওদের হামলায় আমার ভাইয়ের স্ত্রীর বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখতে পারল না। আমরা থানায় বিষয়টি জানিয়েছি।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে জহিরুল হাওলাদার বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমার কোনো লোক মিলনের পরিবারের ওপর কোনো হামলা করেনি। পুলিশের হয়রানির জন্য তারা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি শুনে পুলিশ হাসপাতাল এবং ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে। আপন চাচাতো ভাইদের মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় পাঁচ-ছয়জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সন্তানসম্ভবা এক নারী গুরুতর আহত হন। পরে তাঁর মৃত সন্তান প্রসব হয়। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বদরুল আলম মোল্লা আরও বলেন, ‘শারীরিক আঘাতের কারণেই ওই নারীর গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসক সনদে উল্লেখ করেছেন। এরপরও বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’