লোকমানের পাচার করা ৪১ কোটি টাকা ফেরত আনার দাবি

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংকে জমা থাকা লোকমানের ৪১ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন মোহামেডান সাবেক খেলোয়াড়েরা। ছবি: বিসিবি ওয়েবসাইট
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংকে জমা থাকা লোকমানের ৪১ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন মোহামেডান সাবেক খেলোয়াড়েরা। ছবি: বিসিবি ওয়েবসাইট

ক্লাবের কক্ষ ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়ে ৪১ কোটি টাকা কামিয়েছেন মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। তাঁর বিরুদ্ধে আজ বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও কর্মকর্তারা।

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কক্ষ ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দেওয়ায় গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় ক্লাবটির ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। যিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) পরিচালক। র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী ক্যাসিনো থেকে লোকমান গত দুই বছরে ৪১ কোটি টাকা কামিয়েছেন। যার পুরোটাই জমা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংকে।

ক্লাবের ডিরেক্টর ইন চার্জের এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার ও কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ক্লাব থেকে লোকমানের ৪১ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন মোহামেডানের সাবেক অধিনায়ক ও ক্লাবের স্থায়ী সদস্য বাদল রায়। তিনি বলেছেন, ‘মোহামেডান ক্লাবকে লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। সাফল্য তো নেই-ই, ক্যাসিনো বসিয়ে ক্লাবের ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। ক্যাসিনো থেকে আয় করা ৪১ কোটি টাকা লোকমান হোসেন বিদেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনও তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের কোনো মামলা হয়নি। এই বিশাল অঙ্কের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা। ক্লাবে আর তাঁর কোন জায়গা নেই। শুধু তাই নয় বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) থেকেও লোকমানের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।'

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হটাও, মোহামেডান বাঁচাও’ এই ব্যানারে মোহামেডান সমর্থক দল প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া
লোকমান হোসেন ভূঁইয়া

লোকমান ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলীর হাত ধরে। মোহামেডান ক্লাব নিয়েই মোসাদ্দেক আলীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। দ্রুতই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান লোকমান। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ২০১১ সালে লিমিটেড কোম্পানি হলে তিনি তার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হন। এরপর ২০১৩ সালেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হন। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। বার্ষিক সাধারণ সভাও হয়নি। অলিখিতভাবে তিনিই ক্লাব চালাচ্ছিলেন। স্পনসর আনা, দল গঠনসহ সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন। ক্লাবে একটা পরিচালনা পর্ষদ থাকলেও তা নিষ্ক্রিয়।

সাম্প্রতিক কালে মোহামেডান মানেই সব নেতিবাচক খবর। দেশের শীর্ষ খেলোয়াড়েরা এখন আর মোহামেডানে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। কারণ, এই ক্লাবে মাসের পর মাস পারিশ্রমিক বকেয়া থাকে। এ নিয়ে খেলোয়াড়েরা অনুশীলন বর্জন পর্যন্ত করেছেন। ২০১৭ সালে মোহামেডানকে ফিফার কাঠগড়ায় দাঁড় করান ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার এমেকা ইজিউগো। ২০১২ সালে মোহামেডানের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই নাইজেরীয়। কিন্তু পুরো পারিশ্রমিক তিনি পাননি। দিনের পর দিন তাগাদা দিয়েও সেই বকেয়া পারিশ্রমিক না মেলায় তিনি ফিফায় নালিশ করেন। অথচ, এই মোহামেডানই এখন ক্লাব প্রাঙ্গণে ক্যাসিনো বসিয়ে অবৈধ উপায়ে আয় করছে কোটি কোটি টাকা। আর মাঠের খেলায় তারা শোচনীয়।

ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে ১৯৫৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মোহামেডান অন্তত ১৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। সেই দলটিই গত ১৭ বছর ধরে লিগ শিরোপা জেতে না। ২০১৭-১৮ মৌসুমে তো ১২ দলের মধ্যে দশম হয়েছে। ক্রিকেটে মোহামেডান শেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০০৯ সালে। অথচ খারাপ ফলের জন্য কারও কোনো জবাবদিহি নেই।

ক্লাবের ঘরের ছেলে হিসেবে পরিচিত পাওয়া বাদলের কণ্ঠে ক্লাব বাঁচানোর আকুতি, ‘আমরা সবাই এই ক্লাবে বড় হয়েছি। ক্লাবের ক্রান্তিলগ্নে আজ এখানে জড়ো হয়েছি। মোহামেডান ক্লাবের এমন অবস্থা দেখে যারা ক্লাবটিকে ভালোবাসে তারা নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। আমরা এসব দেখে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। এটা কোনো ক্লাব না এটা একটা প্রতিষ্ঠান, একটা ইতিহাস। ক্লাবটিকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি, কায়সার হামিদ, রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, ইমতিয়াজ আহমেদ, ইলিয়াস হোসেন, ছাইদ হাসান কানন, আবদুল গাফফার, সাবেক অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকুর রহমান, সাবেক পরিচালক ও হকি সম্পাদক সাজেদ এ আদেল, সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল।