কর দিতে অনীহা সরকারি দপ্তরের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহা রয়েছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন কর পরিশোধের জন্য মন্ত্রী-সচিবদের বারবার চিঠি দিলেও প্রত্যাশিত আদায় হচ্ছে না। তুলনামূলকভাবে বেসরকারি খাতে আদায় বেশি।

সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে গৃহকর। এই খাতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার অর্ধেকও আদায় করতে পারে না সংস্থাটি। প্রতিবছরই একই অবস্থা।

সবশেষ অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ৩৩৬ কোটি টাকা দাবির বিপরীতে আদায় হয় ১৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১ কোটি টাকার মধ্যে ৬৯ কোটি টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ১৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ৬৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বেসরকারি খাতে আদায়ের হার ৪৮ শতাংশ হলেও সরকারি খাতে তা ৩৪ শতাংশ।

গৃহকর আদায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় করপোরেশনের সাধারণ সভায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ ছাড়া ২ সেপ্টেম্বর রাজস্ব বিভাগের ২২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করে করপোরেশন। এই রকম বদলির ঘটনা করপোরেশনের ইতিহাসে ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট রাজস্ব সার্কেল কার্যালয়ে কর্মরত থাকায় গৃহকর আদায় কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে মন্তব্য করেন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া সরকারি খাতে গৃহকর আদায় বাড়াতে গত চার বছরে মন্ত্রীদের পাঁচবার এবং সচিবদের দুবার চিঠি দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সবশেষ ২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রীদের চিঠি দেওয়া হয়।

১২ মন্ত্রণালয়ের কাছেই পাওনা ১২৪ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৩৩ মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাছে গৃহকর খাতে পাওনা রয়েছে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০ কোটি টাকা পাওনা রেলওয়ের কাছে।

সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্যমতে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে গৃহকর পরিশোধ বকেয়া থাকা প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন আর রেলওয়ে দুটিই তো সরকারি প্রতিষ্ঠান। একে-অপরের সঙ্গে দেনা-পাওনা রয়েছে। গৃহকর বকেয়া থাকার বিষয়টি পত্রিকায় আসার মতো ব্যাপার না।

এই প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো যদি গৃহকর না দেয় তাহলে সাধারণ মানুষ কেন দেবে? সংস্থাগুলোর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে গৃহকর পরিশোধে সমস্যা হওয়ার কথা না। 

২০১০-১১ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত গত আট অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কম কর পরিশোধ করে। গত নয় অর্থবছরের মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ গৃহকর আদায় হয়। অন্যান্য বছরে এই হার ৪০ শতাংশের নিচে ছিল। 

গৃহকর পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনীহা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেশন ও পৌরসভার কর পরিশোধের ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোভাব হচ্ছে, না দিলে কী করবে? করপোরেশনগুলো হয়তো মামলা করতে পারে। কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপারে। এ জন্য আলোচনার ভিত্তিতে এর সমাধান করা দরকার।