চায়ে এবার বান্দরবানের ব্র্যান্ড

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বান্দরবানের নামে হতে যাচ্ছে চায়ের নতুন ব্র্যান্ড। এ লক্ষ্যে বান্দরবানের সুয়ালকে পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা। জেলার ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত চা এই কারখানায় প্রক্রিয়াজাতের পর বাজারজাত করা হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের এই উদ্যোগ আশার সঞ্চার করেছে জেলার চা–চাষিদের মনে।

চা বোর্ডের বান্দরবানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা না থাকায় বান্দরবানের চা–চাষিরা সংকটে পড়েন। তাঁরা উৎপাদিত চা–পাতা রাঙামাটি ও রাঙ্গুনিয়ার বাগানিদের কাছে অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ জন্য চাষিদের লাভের দিকটি বিবেচনা করেই চা বোর্ড এখানে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের আওতায় ৩০১ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এতে বছরে ৫০ হাজার কেজির বেশি চা–পাতা পাওয়া যায়। আগামী কয়েক বছরে উৎপাদন বাড়লেও যাতে বাজারজাত করার সমস্যা না হয়, কারখানাটি সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি আগামী ১ অক্টোবর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। আর এই কারখানা পুরোদমে চালু হলেই আলোর মুখ দেখবে নতুন চায়ের বান্দরবান ব্র্যান্ড। নতুন এই চা গুণে-মানে প্রচলিত চায়ের চেয়ে উৎকৃষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলায় চা চাষ বাড়াতে কারখানা স্থাপন ছাড়াও নানা উদ্যোগ নিয়েছে চা বোর্ড। এসবের মধ্যে আছে চা–গাছের চারা বিতরণ। গত দুই বছরে চাষিদের মধ্যে সাড়ে চার লাখ চায়ের চারা বিতরণ করা হয়েছে বলে চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের জেলা শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে সুয়ালক ইউনিয়নের সুয়ালক রাস্তার মাথা এলাকায় চা বোর্ডের দপ্তরের পাশে কারখানাটি স্থাপন হয়েছে। বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরে ১৮ লাখ কেজি কাঁচা চা–পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের সক্ষমতাসম্পন্ন কারখানা স্থাপনে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানার জন্য ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারখানা সার্বক্ষণিক চালু রাখার জন্য ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ কেভির জেনারেটরও সংযোজন রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষি সমিতির সভাপতি মংক্যচিং চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা রোয়াংছড়ি, রুমা ও বান্দরবান সদর উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে চা চাষ করেছেন। চা বোর্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের আওতায় তাঁদের চা–গাছের চারা, চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁরা সস্তায় চা–পাতা বিক্রিতে বাধ্য হন। রাঙামাটি ও রাঙ্গুনিয়ার বাগানিদের কাছে তাঁরা চা–পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখন বান্দরবানে কারখানা হওয়ায় বাগানিদের আর সস্তায় পাতা বিক্রি করতে হবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আমির হোসেন বলেন, বান্দরবানে প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় নতুন কৃষিপণ্য হিসেবে নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ কারণে এখনো ৩০১ একরের মতো জমি চা চাষের আওতায় সম্ভব হয়েছে। তবে গত দুই বছরে রুমা উপজেলায় ৩০ পরিবারে ১ লাখ ১২ হাজার, বান্দরবান সদর উপজেলায় ৩৩ পরিবারে ৩ লাখ ৩৮ হাজার চা চারা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

পাহাড়ে কৃষকেরা ধীরে ধীরে চা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নতুন কারখানা স্থাপিত হওয়ায় বান্দরবানের নতুন চায়ের ব্র্যান্ড বাজারে আসবে। এই চা হবে গুণে–মানে উৎকৃষ্ট। তাই দ্রুত বাজার পাবে।