খালেদা জিয়াকে টেলিভিশন দেখতে দেওয়া হয় না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাঠানপাড়া, রাজশাহী, ২৯ সেপ্টেম্বর। ছবি: শহীদুল ইসলাম
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাঠানপাড়া, রাজশাহী, ২৯ সেপ্টেম্বর। ছবি: শহীদুল ইসলাম

সরকারের লুটপাট আর ক্যাসিনো নিয়ে সমালোচনা, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার এবং সরকারের পদত্যাগের দাবির মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বাস বন্ধ করা ও হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পূর্ব পাশের রাস্তায় পাঠানপাড়া এলাকায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখন হেঁটে বাথরুমে যেতে পারেন না। বসে খেতে পারেন না। ১৮ মাস ধরে তাঁকে টেলিভিশন দেখতে দেওয়া হয় না। দুটি মাত্র পত্রিকা দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। তাঁর মুক্তি হবে না, আদায় করতে হবে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি তত্ত্ব দিয়েছেন ক্যাসিনোর টাকা নাকি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মাসিকভাবে যায়। কী চমৎকার আবিষ্কার আপনার! ক্রিয়েটিভ ইনফরমেশন মিনিস্টার বলা যাবে। কারণ, এই তত্ত্ব তিনি আবিষ্কার করেছেন। এই তত্ত্ব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আপনাদের মুখোশ জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এক বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা পার হয়ে গেছে সুইস ব্যাংকে। তার চেয়েও বড় অপরাধ, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ৩০ তারিখের ভোট করা হয়েছে ২৯ তারিখে।’ এ সময় মির্জা ফখরুল সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে থেকে ২৬ লাখ লোককে আসামি করা হয়েছে। এক লাখ মামলা করা হয়েছে। তালিকা করে ১০০ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭০০ অজ্ঞাতনামা। এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি মানুষের নামে মামলা আছে। যে বাংলাদেশের মানুষ আগে মামলা চিনত না, কোর্টের বারান্দায় কোনো দিন যায়নি, তার বিরুদ্ধেও মামলা আছে। কিসের মামলা? নাশকতার মামলা। নাশকতা কী, সে নিজেও জানে না, বোঝেও না। এসব বাদ দেন। এসবের দিন শেষ। গোটা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন, জোর করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

সাম্প্রতিক সময় প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার অর্জনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাইরের পুরস্কার নিয়ে লাভ হবে না। দেশের মানুষের ভালোবাসা নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেটা সম্ভব হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে পথে পথে পুলিশ দেখে মনে হচ্ছে রাজশাহীতে কারফিউ চলছে। রাজশাহী একটা ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে।

পুলিশের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দুই-তিন জায়গায় পুলিশ আমার গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেছে। পরে আমার চেহারা দেখে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘১৭ কোটি মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। চান না শুধু একজন। তাঁর নাম শেখ হাসিনা। আইনে তাঁর মুক্তি পাওয়ায় কোনো বাধা নেই। একমাত্র বাধা তিনি।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান, কামরুল মনির, হারুনার রশীদ খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, মোরতাজুল করিম বাবলু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত প্রমুখ।

এদিকে রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতাদের বেগ পেতে হয়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগ। নেতারা বক্তব্যে তাঁদের রাজশাহী শহরে ঢুকতে গিয়ে কেমন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, তার বর্ণনা দেন। পাবনায় বাস থেকে তাঁদের ৪০ জন নেতা-কর্মীকে নামিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এই সমাবেশ পর্যন্ত তাঁদের আড়াই হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করার অভিযোগ করা হয়। সমাবেশ থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি করা হয়েছে।