সরাইলে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পারাপার

লাল নিশান উড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পার করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া মোড়ের পূর্ব পাশে।  ছবি: প্রথম আলো
লাল নিশান উড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পার করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া মোড়ের পূর্ব পাশে। ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়টি ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া মোড়ের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বিদ্যালয়টিতে ৭০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী মহাসড়কের পশ্চিম পাশের বাসিন্দা। এসব শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হয়।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে একটি পদচারী–সেতু (ফুটওভারব্রিজ) নির্মাণের দাবি করে আসছেন। আশ্বাস পেলেও পদচারী–সেতু নির্মাণ করা হয়নি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর এর সামনে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ শিক্ষার্থী ও দুজন অভিভাবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। কয়েক বছর ধরে এই মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এতে মহাসড়ক পারাপারে ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনা রোধে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর আগে ও ছুটির পর শিক্ষক–কর্মচারী ও অভিভাবকেরা লাল পতাকা হাতে নিয়ে নিরাপদে শিক্ষার্থীদের পারাপারের চেষ্টা করে আসছেন।

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ফজলে হোসেন প্রথম আলোকে বলে, ‘প্রতিদিন আমাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই মহাসড়ক পারাপার হতে হয়। গাড়িগুলোও চলে বেপরোয়া গতিতে। কখন যে কার প্রাণ যায়, ঠিক নেই। আমরা এখানে একটি ওভারব্রিজ চাই।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষক-অভিভাবকের একটি দল লাল পতাকা হাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে মহাসড়ক পারাপারে সহযোগিতা দিচ্ছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক–সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কটি পারাপার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমাদের সতর্কতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সড়ক পারাপার করতে হয়। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকি। শিক্ষার্থীদের পারাপারের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি।’

প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে অনেক জনপ্রতিনিধির কাছে অনুরোধ করেছি। আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে কয়েক মাস ধরে লাল নিশানা হাতে শিক্ষার্থীদের সড়ক পারাপার করে আসছি। তারপরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। শিক্ষার্থীর প্রাণ মহাসড়কে ঝরুক, আমরা তা চাই না। আমরা এখানে শিগগির একটি ফুটওভারব্রিজ চাই।’

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে এখানে আপাতত ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই।’