বাদী এখন আসামি

নাসির উদ্দিন
নাসির উদ্দিন

২০১৮ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের ২৭ গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র কেনার জমা ভাউচার জালিয়াতি করে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠার পর জেলা সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন গত ১৫ জুন ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় মামলা করেন।

ওই মামলার তদন্তের ভার আসে দুদকের ওপর। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর ২৫ জুন রাজশাহী মহানগরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করেন। মামলার তদন্তে দেখা গেছে, ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জেলা সঞ্চয় অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। তদন্তের একপর্যায়ে গত বুধবার জেলা সঞ্চয় অফিসের উচ্চমান সহকারী হাছান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে তাঁর আলমারিতে রাখা ২২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই টাকা আত্মসাৎ করা টাকার একটি অংশ।

দুদক সূত্র জানায়, তদন্তে ওই অফিসের আরও কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের আরও দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাঁরা হলেন নওগাঁ জেলা সঞ্চয় অফিসার মো. নাসির উদ্দিন ও রংপুর বিভাগীয় সঞ্চয় অফিসের উপপরিচালক মো. মহরম আলী। বিকেলে নওগাঁ সদর থানার ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার বাদী নওগাঁ জেলা সঞ্চয় অফিসার মো. নাসির উদ্দিন। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধান সূত্র বলছে, নওগাঁর ওই অফিসে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করার ক্ষমতা ছিল মো. নাসির উদ্দিন, হাছান আলী ও উপপরিচালক মো. মহরম আলীর। অফিস সহায়ক সাদ্দামের এ বিষয়ে কোনো ক্ষমতা ও সুযোগই ছিল না। অনুসন্ধানে জানা যায়, আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই তিনজন কোনো তদন্ত ছাড়াই নিজেদের উদ্যোগে অফিস সহায়ক সাদ্দামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর স্থানীয় সন্ত্রাসী দিয়ে সাদ্দামকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকাছাড়া করে দেন। সাদ্দাম ভয়ে ছয় মাস অফিসেই যেতে পারেননি। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর ওই সব তথ্য জেনেছে দুদক।

আরও তদন্ত করতে গিয়ে উপপরিচালক মহরম আলীর কাছে তাঁর স্ত্রীসহ বিভিন্ন নামে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। আত্মসাৎ করা টাকার অংশ হিসেবে ওই সঞ্চয়পত্র জব্দ করা হয়েছে। নাসির উদ্দিনের কাছে ২৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। আর উচ্চমান সহকারী হাছান আলীর আলমারি থেকে উদ্ধার করা হয় ২২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

দুদক জানিয়েছে, ইতিমধ্যে মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করে ফেলেছে তারা। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।