রাজশাহীতে বাস টার্মিনাল যেন গ্যারেজ

বছরজুড়েই টার্মিনালে জলাবদ্ধতা লেগে থাকায় নেই যাত্রীদের আনাগোনা। রাজশাহীর নওদাপাড়া আন্তজেলা বাস টার্মিনালের এই চিত্র গতকাল সোমবারের।  ছবি: প্রথম আলো
বছরজুড়েই টার্মিনালে জলাবদ্ধতা লেগে থাকায় নেই যাত্রীদের আনাগোনা। রাজশাহীর নওদাপাড়া আন্তজেলা বাস টার্মিনালের এই চিত্র গতকাল সোমবারের। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসনে ও যাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৪ বছর আগে নওদাপাড়ায় বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয় বাস টার্মিনাল। এতে ব্যয় হয় প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকা। কিন্তু বিশাল এই টার্মিনাল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে শুধু বাস রাখার গ্যারেজ হিসেবে। বাসচালকেরা শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে যাত্রী তোলেন। রাস্তা দখল করে থাকে এসব বাস। এতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে যানজট বেড়েই চলেছে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে নওদাপাড়া এলাকায় ৭ দশমিক ৪১ একর জায়গায় আন্তজেলা বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০০৪ সালে। এতে ব্যয় হয় ৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। টার্মিনালে একসঙ্গে প্রায় ৫০০টি বাস দাঁড়াতে পারে। টার্মিনালের পাশাপাশি শহরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক হিসেবে ভদ্রা পর্যন্ত ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিকল্পনা ছিল আন্তজেলা বাসগুলো এই টার্মিনাল থেকে সরাসরি ছেড়ে যাবে। কিন্তু সব বাসই শহরের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলছে। ফলে টার্মিনালটি এখন সে রকম ব্যবহৃত হচ্ছে না।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালের ভেতরে বেশ কিছু গাড়ি রাখা। চালক-সহকারী ছাড়া ভেতরে তেমন কেউ নেই। টার্মিনালের সব কটি প্রবেশপথে জলাবদ্ধতা। কিছুক্ষণ পরপর খালি বাস টার্মিনাল থেকে বের হচ্ছে।

বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টার্মিনালে যাত্রী না আসায় এটি এখন বাস পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। চালকেরা বিশ্রাম নেন। বাসের ধোয়ামোছার কাজও হয় এখানে। পরে শহর ঘুরে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়।

যাত্রী না আসার কারণ নিয়ে চালকেরা জানান, শহর থেকে দূরে হওয়ায় যাত্রীরা টার্মিনালে আসেন না। কারণ, শহরের যাত্রীদের টার্মিনালে আসতেই ২০ টাকা ভাড়া লাগে। টার্মিনাল থেকে কাছাকাছি উপজেলার বাসভাড়া ২০ থেকে ৩৫ টাকা। একটি পরিবহনের চালক নাঈম ইসলাম বলেন, এই টার্মিনাল এখন শুধু গাড়ির শিডিউল নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। শিডিউল নিয়ে বাস আবার যাত্রী নিতে শহরের দিকে যায়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে টার্মিনালের এক চেইন মাস্টার বলেন, ‘এত টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল করে কোনো লাভই হলো না। বাসগুলোকে যাত্রী নিতে সেই শহরেই যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া টার্মিনাল চত্বরে পানিনিষ্কাশনের কোনো নালা নেই। ফলে সারা বছরই কাউন্টারের আশপাশ জলাবদ্ধ থাকে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো তালাইমারী মোড়, ভদ্রার মোড়, বিন্দুর মোড় ও গ্রেটার রোড, রেলস্টেশনের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠায়। এ সময় সড়কে বাসগুলোর জট তৈরি হয়।

রাজশাহীর চারঘাটে যাওয়ার জন্য ভদ্রাতে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন সোহাগ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘শহরে বাস পাই বলে এখান থেকে উঠি। যদি সব বাস নওদাপাড়ায় থাকত, তবে আমরা সেখানেই যেতাম।’

তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান বলছেন, ‘টার্মিনালে যাত্রী না যাওয়াতেই বাসগুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে কাউন্টার করে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। আমরা চেষ্টা করছি টার্মিনালেই কাউন্টারগুলো চালু করার।’

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নগরবাসীর সুবিধার জন্য বাস টার্মিনাল করে দিয়েছি। এখন তারা যদি বাস নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী তোলে, সেটা তো আমরা দেখব না। আমরা বড়জোর টার্মিনালটির উন্নয়নে কাজ করতে পারি।’