চাকরির বইয়ের পাঠক বেশি

রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে পাঠক বেড়েছে। তবে যাঁরা নিয়মিত আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই পড়ছেন বিভিন্ন চাকরিবাকরির বইপত্র। আগের তুলনায় কমেছে সাধারণ পাঠক, নারী ও শিশু পাঠকের সংখ্যা।

সাধারণ পাঠকেরা বলছেন, বিষয় অনুযায়ী বই সাজানো নেই। এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। নেই কোনো ক্যাটালগ। ফলে নির্দিষ্ট বই খুঁজতে সময় অপচয় হচ্ছে। আসনসংখ্যাও কম। আর গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, অল্প দিনেই এ সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।

নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় গ্রণগ্রন্থাগারটির অবস্থান। গত মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বয়সের পাঠক এসেছেন। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ১৫০। তাঁদের বেশির ভাগের টেবিলে চাকরির বইপত্র। পত্রিকার টেবিলে কয়েকজনকে দেখা গেছে পত্রিকা পড়তে। প্রবীণদের জন্য আলাদা একটি কর্নার করা হয়েছে। সেখানে রাখা টেবিল শূন্য। আধা ঘণ্টা পর একজন প্রবীণ পাঠক এলেন। ওই প্রবীণ লাইব্রেরির কয়েকটি বই সামনে নিয়ে পড়ছিলেন।

কিন্তু তরুণদের অধিকাংশই এসেছেন চাকরির বই পড়তে। গ্রন্থাগার ঘুরে সাত থেকে আটজনকে দেখা গেছে চাকরি বাদে অন্য বই পড়তে। নারী পাঠক পাওয়া গেল হাতে গোনা কয়েকজন। গ্রন্থাগারে শুধু বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, রাজশাহী কর্নার বইয়ের ক্যাটালগ ছাড়া সব ক্যাটাগরির বইগুলোর তালিকা নেই। সেগুলো বিভিন্ন শেলফে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ আর শিশু পাঠকক্ষে শিশু পাঠকদের দেখা যায়নি। যদিও ২৬ শিশু আসার স্বাক্ষর রয়েছে খাতায়।

নিয়মিত আসা পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রন্থাগারে বিষয় অনুযায়ী শেলফ থাকলেও ঠিকঠাক জায়গায় নেই সব বই। নেই ক্যাটালগও। ফলে বই খোঁজার ক্ষেত্রেই সময় ব্যয় করতে হয়। সকাল ১০-১১টার দিকে বসার জন্য লাইন ধরতে হয়। নারীদের জন্য একটা টয়লেট রয়েছে। আর পুরুষদের জন্য দুইটা। প্রতিদিন কয়েক শ মানুষের জন্য এটা একেবারেই কম। তাঁদের টয়লেটেও লাইনে দাঁড়াতে হয়। এমনকি খাবারের কক্ষেও বসতে বেগ পেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বলার পরও গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিচ্ছে না।

গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, গ্রন্থাগার খোলা থাকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রতিদিন গ্রন্থাগারে ২০০ থেকে ৩০০ জন পাঠক আসেন। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে বাসায় বই নিয়ে ১৫ দিন রেখে পড়েন ১৩০ জন পাঠক। গ্রন্থাগারে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এগুলো ১৩০টি শেলফে রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা পাঠকক্ষ। সেখানে রয়েছে হাজারখানেক বই। চাকরির বই পড়ার জন্য রয়েছে সাধারণ পাঠকক্ষে আলাদা কর্নার। চাকরির বই পড়া পাঠক বাড়ার কারণে ২০১৮ সালের শেষ দিকে চাকরির বইপড়ুয়াদের জন্য গ্রন্থাগারের সাধারণ পাঠকক্ষের বিশাল জায়গা ছেড়ে দিয়ে করা হয়েছে জব কর্নার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন সোহেল রানা। তিনি নিয়মিতই আসেন এই গ্রন্থাগারে। তিনি চাকরির বইয়ের পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞানসহ অন্য বিষয়ের বইও পড়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে তিন-চার বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু-তিন দিন আসি। এসে চাকরির পাশাপাশি অন্য বইও পড়ি। তবে বিষয় অনুযায়ী শেলফে বই খুঁজে পান না বলে অভিযোগ করেন। আর এখানে সকাল ১০টার পর থেকে প্রচুর পাঠক আসেন। প্রায় প্রতিদিনই এ সময়টাতে লাইন ধরে গ্রন্থাগারে নাম এন্ট্রি করে প্রবেশ করতে হয়।

রুবেল হক নামের একজন ব্যক্তিগত চাকরির বই নিয়ে পড়ছিলেন গ্রন্থাগারের সাধারণ পাঠকক্ষে। তিনি বলেন, ‘চাকরির বইও পড়ি, গ্রন্থাগারে রাখা বইও পড়ি। ওই পাশে (জব কর্নার) জায়গা নেই বলে এ পাশে এসে পড়ছি।’ পাশেই আরেকজন পড়ছিলেন একটি গল্পের বই। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত কয়েক দিন ধরে আসছি। পরিবেশ নিরিবিলি বলে এখানে পড়তে ভালো লাগে। তবে বই খুঁজতে সমস্যা হয়’।

গ্রন্থাগারের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ার কাম উপপরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অনেক পাঠকের আগমন ঘটে। গ্রন্থাগারে আসা অধিকাংশই আসেন চাকরির পড়াশোনা করার জন্য। অন্য বইগুলোর দিকে তেমন আগ্রহ নেই তাঁদের। শহর এলাকায় বাসায় পড়ার ভালো অবস্থা নেই। এখানে পরিবেশটা নিরিবিলি। তাই এখানে পড়তে আসেন অনেকে। তবে শিশু ও নারী পাঠকের সংখ্যা কম।

শিশু পাঠকের সংখ্যা কম কেন? তিনি বলেন, এই অবস্থা সারা বাংলাদেশেই। শিশুদের স্কুলের যে সিলেবাস, তাতে তারা সেগুলো পড়ারই সময় পায় না। আর বর্তমানে অভিভাবকেরাও একটা অন্য রকম প্রতিযোগিতায় আছেন, তাঁরা চান শুধু তাঁদের ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় ভালো করুক। যেমন, কিছুদিন আগে এক শিশু এসেছিল এখানে। তার মা একটু পরই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। তাঁদের পরিকল্পনা আছে শিশুদের জন্য শিশু পাঠকক্ষে খেলনা দেওয়ার। তারা এখানে খেলাচ্ছলে পড়বে।

বইয়ের ক্যাটালগ সমস্যা নিয়ে উপপরিচালক আবু সাইদ বলেন, গ্রন্থাগারে একটা পদ খালি আছে। যিনি বইয়ের শেলফগুলো বিষয় অনুযায়ী সাজিয়ে রাখবেন। ওই পদে লোক দেওয়া হবে শিগগিরই। তবে লাইব্রেরি ডিজিটাল করার প্রস্তাব দিয়েছেন।