'চাঁদাবাজির গডফাদার সাংসদ মোয়াজ্জেম'

মোয়াজ্জেম হোসেন
মোয়াজ্জেম হোসেন

জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিনিধি সভা। তাতে উপস্থিত চারজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ অনেক পরিচিত মুখ। এমন ভরা মজলিশে তৃণমূলের এক নেতা যে বক্তব্য দিলেন, তাতে অবাক অনেকেই। ওই নেতা স্থানীয় এক সাংসদকে সরাসরি ‘চাঁদাবাজির গডফাদার’ ও ‘আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করেন। ওই সাংসদ নিজেও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সুনামগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে ওই প্রতিনিধি সভা হয়। এতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরেন তৃণমূলের নেতারা। এ সময় দলে দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়টিও ওঠে আসে। দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি সভায় ওই চাঞ্চল্যকর বক্তব্য দেন ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ (মুরাদ)। যাঁর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন। 

সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে শামীম আহমেদ বলেন, তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর বিরোধিতা করেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ (বিলকিছ) ও আপন ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেন। সাংসদ মোয়াজ্জেম নির্বাচন প্রভাবিত করায় তাঁর ভাই জয়ী হয়েছেন। দলীয় প্রতীক নৌকার পরাজয় হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকা তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শামীম আহমেদ বলেন, জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজির খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। এসব চাঁদাবাজির গডফাদার হচ্ছেন সাংসদ মোয়াজ্জেম। তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন। সাংসদ বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে টেনেছেন। তিনি নিজেও নব্য আওয়ামী লীগার। ২০০৮ সালে দলে এসেছেন। শামীম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সাংসদ মোয়াজ্জেম ২০০৮ সালের আগে আওয়ামী লীগ করেছেন প্রমাণ করতে পারলে আমি জুতার মালা গলায় দিয়ে দল থেকে বের হয়ে যাব।’ 

শামীম আহমেদ এসব যখন বলছিলেন, তখন সভামঞ্চে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মতিউর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংসদ মুহিবুর রহমান, জয়া সেনগুপ্তা, মোয়াজ্জেম হোসেন ও শামীমা শাহরিয়ার, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা। 

সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বক্তব্য দেওয়ার সময় শামীম আহমেদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে আমার ছোট ভাই। তার ভেতরে দুঃখ আছে। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। সে–ও আমার সঙ্গে চলে আসবে। তবে সে যেসব অভিযোগ করেছে, সেগুলো সত্য নয়।’

সভাসূত্রে জানা গেছে, যাঁরা গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, সভা শুরু পর তাঁদের মিলনায়তন থেকে বের হয়ে যেতে বলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এরপর উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সম্মেলনের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পরামর্শ নিতে বলা হয়। জেলা সম্মেলনের আগে জেলার সব ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠনতন্ত্র মোতাবেক করতে বলা হয়েছে। তবে যেসব উপজেলায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছে, সেসব উপজেলার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

সভায় কেন্দ্রীয় নেতা হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, সেটি চলবে। অপরাধীরা যে দলেরই হোক, কেউ ছাড় পাবে না। চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ না টেনে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকদের যাঁরা দলে এনেছেন, নিজেরাই তাঁদের বের করে দিন।